মাত্র ৮ বছরের ক্ষমতাকালে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যই ১ লাখেরো বেশি মানুষকে হত্যা, গুম, খুন নির্যাতন, নির্বাসন ও ফাসিতে ঝোলানো কুখ্যাত স্বৈরশাসক কসাই ইদি আমিন। তিনি মানুষের মাংস খেতেন। তার ফ্রিজে মানুষের কাটা মাথা ও অন্যান্য অঙ্গ মজুদ রাখতেন। মানুষের মাংস খাওয়ার নেশা ছিল তাঁর। তিনি সুন্দরী মেয়েদের অপহরণ করে তাদের জীবিত কবর দিতেন অথবা কুমিরকে খাওয়াতেন। ইতিহাসে অন্যতম ববর ও স্বৈরাচারী েএকনায়ক দ্য বুচার অব উগান্ডা নামে খ্যাত এই উগান্ডার শাসক।
১৯৭০ দশকে উগান্ডায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহন করেন তিনি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এই ইদি আমিন। শাসক হিসেবে তিনি পাগলাটে তো বটেই একই সঙ্গে ছিলেন ভয়াবহ রকম বর্বর। উগান্ডার কসাই নামে পরিচিত ইদি আমিন বেড়ে উঠেন সাধারণ এক পরিবারে। জার্মানির কুখ্যাত শাসক হিটলারের ভক্ত ছিলেন অন্ধ ভক্ত ছিলেন ইদি আমিন। অশিক্ষিত ও অজ্ঞ এক বাবুর্চি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ঘটনাক্রমে হয়ে উঠেন দেশের সবচেয়ে ক্ষমতার ব্যক্তি।
ইতিহাসের অন্যতম উদ্ভট রাষ্ট্রনায়ক ইদি আমিন নিজের পরিচয়ও দিতেন অনেকটা অদ্ভুত ভাবেই। তাকে সম্বোধন করতে হতো মহামান্য আজীবন রাষ্ট্রপতি, ফিল্ড মাশাল ড. ইদি আমিন দাদা, পৃথিবীর সকল পশু ও সমুদ্রের মৎস্যকলের প্রভু এবং আফ্রিকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উগান্ডা বিজেতা। ব্যক্তিগত জীবনে ডজনখানেকের মতো বিয়ে করেছিলেন ইদি আমিন। ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন সময় ৫ জনকে দিয়েছিলেন প্রথম লেডি মর্যাদা। এক সুন্দরীর প্রেমে পড়ে তাকে তো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসিয়ে দেন। এদের মধ্যে তিনজনকে আবার বিতারের জাতির উদ্দেশ্যে ফোন দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন তালাকের।
সবমিলিয়ে অন্তত ৪৩ সন্তানের জনক তিনি। ইদি আমিনের জন্ম ১৯২৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত উগান্ডার কোবোকো অঞ্চলে অভ্যস্ত দরিদ্র একটি পরিবারে। শৈশবেই বাবাকে হারানো আমিন বড় হয়েছিলেন তার মায়ের কাছে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি টুকু পেরিয়েছিলেনকিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে। দুবেলা খাবার যেটাতে বাল্য বয়সেই কাজে নামতে বাধ্য হোন তিনি। ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ কলোনিয়ান সেনাবাহিনী কিংস আফ্রিকান রাইফেলস এ বাবুর্চি হিসেবে যোগদান করলেও পেশি শক্তি ও নৃশংসতার পরিচয় দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যোদ্ধা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
১৯৬২ সালে উগান্ডা দুটি আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গবাদি পশু নিয়ে দাঙ্গার সৃষ্টি হলে ইদি আমিনকে দাঙ্গা দমনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই দাঙ্গা দমনে আমি আক্ষরিক অর্থে নরদলি দেন। এই নিষ্ঠুরতার জন্য শাস্তির পরিবর্তে মেজর জেনারেল পদে উন্নতি হন আমিন। একসময় দেশটির সেনাবাহিনীতে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন ইদি আমিন। সেই সুযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে হটিয়ে নিজেই ক্ষমতায় আসেন আমিন। ক্ষমতা দখলের পর প্রথমেই তিনি রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী ভেঙে দিয়ে নিজস্ব এক কিলার বাহিনী গঠন করেন। সেই সময় ইদি আমিন সরাসরি নির্দেশে হত্যার শিকার হন দেশটির আর্চাশপ বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ বহু বুদ্ধিজীবী।
ইতিহাসের সকল অত্যাচারী শাসকদের শেষ পরিণতি অত্যান্ত নির্মম হয় ইদি আমিনের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। কুকর্মের জন্য তাকে আফ্রিকার কশাই উপাধি দেওয়া হয়। আর জনসাধারণের মৌলিক অধিকার হরণের ফলে মানুষের মনে ক্ষোভধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭৫ সালে দেশের অর্থনীতি প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়। মুদ্রাফীতি হাজারগুণ অতিক্রম করে। সাধারণ সাভারের দাম দাঁড়ায় ৩০০ টাকায়। ১৯৭৮ সালে তানজানিয়ার সাথে বিরোধের জেরে তানজানিয়া আক্রমণ করে ইদি আমিন বাহিনী। তানজানিয়া প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তাতে যোগ দেয় উগান্ডার সাধারণ জনগণ।সম্মিলিত প্রতিরোধে ব্যর্থ হয় আমিন বাহিনী। এক সময় পরাজয় মেনে নিয়ে শান্তির ঘোষণা দেন ইদি আমিন কিন্তু তানজানিয় মেনে নেয়নি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ইদি আমিন লিবিয়ায় গাদ্দাফির কাছে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এখানেই শেষ হয় উগান্ডায় ইদি আমিনের অধ্যায়।
ড.আসিফ নজরুলের সাহসিকতার পরিচয়