হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. কোনো কোনো সময় ক্ষুধার দরুন এমন হতেন যে, কোমর পর্যন্ত সোজা করতে পারতেন না , কুনই উপর ভর করে সামান্য সোজা হতেন। তাও পেটে পাথর বাধার পর। পাথর না বেঁধে কনুইর উপর ভর করেও সোজা হতে পারতেন না। এমন কঠিন জীবন যাজনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি নিজেই বলেন-
একদিন আমি এমন ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে রইলাম । হযরত আবু বকর রাযি. আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। আমি তাকে কুরআনের একটি আয়াত জিজ্ঞাসা করলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো, তিনি আমার অবস্থা বুঝে আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি আমার অবস্থা বুঝেননি, বিধায় এভাবেই চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আমার পাশ দিয়ে ওমর রাযি. অতিক্রমকরলেন। তিনিও আমার অবস্থা বুঝলেন না। তার পর আসলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নবীজী আমার অবস্থা বুঝলেন, তাই আমাকে সঙ্গে নিয়ে চললেন। ঘরে এসে একটি পাত্রে সমান্য দুধ দেখতে পেলেন। ঘর ওয়ালাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ দুধ কোথা হতে এসেছে? ভেতর থেকে জাওয়াব আসলো, অমুক ব্যক্তি আপনাকে দিয়েছেন।
নবীজী হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. কে বললেন, আবূ হুরায়রা। আসহাবে সুফফার সকল সদস্যদেরকে ডাকো। আহলে সুফফা যেহেতু ইসলামেরই মেহমান ছিলো, আবার তাদের ঘর-বাড়ি , ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না , তাই নবীজীর কাছে যদি কোনো সদকা ইত্যাদি আসতো। নবীজী এগলো আসহাবে সুফফার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি নিজে এগুলো খরচ করতেন না। কোনো হাদিয়া আসলে, তিনি তা ব্যবহার করতেন। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. নবীজীর কথা অনুযায়ী আসহাবে সুফফার সকলকে ডাকার জন্য গেলেন। তিনি বলেন, বিষয়টা আমার কাছে খারাপ লাগলো। কারণ, আমি ভেবেছিলাম পূর্ন দুধটা আমি একা পান করবো। এতি কিছুটা শক্তি হবে। কিন্তু নবীজী দেখি সবাইকে ডাকার জন্য কথা বলতেছেন। এতটুকু দুধ সকলের কী হবে? তবুও নবীজীর হুকুম পালনার্থে তিনি সবািইকে নবীজির সংবাদ পৌছালেন যে, নবীজী তোমাদের সবাইকে ডাকছেন।
খরব শুনে সকলে দরবারে রেসালাতে হাজির হলেন, তখন নবীজী হযরত আবূ হুরায়রা রায. কে বললেন, সকলকে দুধ পান করাও । নবীজির নির্দেশে তিনি পাত্র নিয়ে সবািইকে দুধ পান করালেন। সকলে তৃপ্তিসহকারে দুধ পান করলেন। সবশেষে বাকি রইলেন নবীজী আর আবূ হুরায়রা। যখন বাকি দুধটা নবীজীর সামনে পেশ করলেন, নবীজী মুচকি হেসে বলেলেন, আবু হুরায়রা তুমি পান করো। তিনি আবার পান করলেন। নবীজী বললেন, আরো পান করো, তিনি আবার পান করলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আরো পান করো । হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কসম ঐ সত্বার যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পপ্রেরণ করেছেন। আমি এর চেয়ে বেশি আর পান করতে পারবো না। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাকি দুধ পান করলেন।