অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবনটাই দিয়ে দিলেন। অথচ বয়সটা মাত্র ১৮। মানবিক এই কিশোরের নাম জুবায়ের। ২০২৪ সালের এক এপ্রিল গাইবান্ধা শহরের মাঝিপাড়া এলাকায় অপরিচিত এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় জুবায়ের প্রাণ হারিয়েছেন। ঐদিন দুপুরে পারিবারিক কলহের জেদে গৃহবধূ রাশিয়া বেগম তার শিশু সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন রেল লাইনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন জুবায়ের।
মা ও শিশুকে তিনি বাঁচাতে যান। এ সময় সান্তাহারগামী লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় তিনজন ওই রেললাইন থেকে সিটকে পড়েন। এতে শিশু সন্তান বেঁচে গেলেও ওই নারী ও জুবায়ের না ফেরার দেশে চলে গেছেন। জোবায়ের তার মা-বাবার একমাত্র ছেলে ছিল। তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সে একদিন ভালো চাকরি করবে, পরিবারের অভাব অনটন দূর করবে। এখন জুবায়েরের মা বাবা বুঝে উঠতে পারছেন না, তারা কাকে নিয়ে বাঁচবেন ,কি নিয়ে বাঁচবেন।
ছাত্র হিসেবে জোবায়ের মেধাবী ছিলেন। তার পুরো নাম জুবায়ের রহমান নাজিউল। তে গাইবান্ধা শহরে ফুলছরীর একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর সদর উপজেলার উত্তর হরিণসিংহা এলাকার এসকেএস স্কুল এন্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। জিপিএ 5 পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। একই কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। মেধাবী হওয়ায় কলেজ থেকে তার বেতন ভাতা নেওয়া হতো না। সে প্রথম আলোর জিপিএ সংবর্ধনা পেয়েছে। জুবের শহরের থানা পাড়া একটি মেসে থেকে লেখাপড়া করত।
রোজার কয়েকদিন আগেও সে বাড়ি থেকে ঘুরে গেছে। কয়েকদিন পর ঈদের ছুটিতে আবার বাড়িতে আসার কথা ছিল। বাড়ি আসার পর সে ঈদের কেনাকাটা করতে চেয়েছিল। তার সেই আসার পূরণ হলো না।মা-বাবা বুঝছেন না, তারা কাকে নিয়ে ঈদ করবেন। জুবায়েরের বাবা জাহিদুল পেশায় একজন দর্জি। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে জোবায়ের ছোট। বড় মেয়ে জান্নাতি খাতুন এর বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়ের বিয়ের পর জুবায়ের ছিল সব।
আগে তাদের বাড়ি ছিল ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে। নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে ছয় বছর আগে ভরতখালি গ্রামে এসে পাঁচ শতক জমি কিনে তারা বসবাস শুরু করেন। বসতভিটা ছাড়া তাদের কোন সম্পদ নেই। দর্জির কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলের পড়াশোনার খরচে চালাতেন। কোনমতে তাদের সংসার চলত। জুবায়েরের এক মামাও তাকে পড়াশোনায় সাহায্য করত। এদিকে রাজিয়াকে বাঁচাতে না পারলেও আহত দের বছরের শিশু আবির হোসেন বর্তমানের শঙ্কা মুক্ত রয়েছে। পরিবারের লোকজন তার দেখভাল করছেন। ওই শিশুর মা রাজিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জে। স্বামীর কর্ম না থাকায় পারিবারিক সমস্যার কারণে তিনি এ ভুল সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হন।