ভয়ঙ্কর বাংলা ভূতের গল্প “ছায়ার ঘর”,…..ভয়ঙ্কর বাংলা ভূতের গল্প “ছায়ার ঘর”…..বিস্তারিত পড়ুন….
গল্পের নাম: “ছায়ার ঘর”
১
রংপুর শহরের প্রান্তে, পুরনো এক জমিদারবাড়ি। স্থানীয়রা একে ডাকে “ছায়ার ঘর” নামে। বাড়িটি বহু বছর ধরে খালি পড়ে আছে। লাল ইটের দেয়ালগুলো ক苂苂 হয়ে গেছে, জানালার কাঁচগুলো ভাঙা, আর ছাদ থেকে যেন ধুলোর স্রোত নেমে আসে।
তবু শহরে যখন নতুন লোক আসে, তখন একবার না একবার তাদের পা সেখানে পৌঁছায়। তেমনই একদিন, ঢাকা থেকে আসা স্থপতি জয়ন্ত সাহা রংপুরে এসেছিলেন একটি রিসোর্ট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য। তিনি যখন শুনলেন বাড়িটির ইতিহাস, তখন কৌতূহল আর পেশাগত আগ্রহ—দুয়ে মিলে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, একবার দেখে যাবেন ‘ছায়ার ঘর’।
২
জয়ন্ত বিকেলবেলা একটি স্থানীয় গাইড নিয়ে ছায়ার ঘরের সামনে উপস্থিত হলেন। গাইড, নাম তার রাসেল, বললো, “স্যার, একবার ঢুকতে চান বুঝি?”
জয়ন্ত হেসে বললো, “ভয় পাও না তো?”
রাসেল মুখ গম্ভীর করে বললো, “ভয় তো লাগে স্যার। তবে আপনি যদি বলেন, আমি যাই।”
ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে জয়ন্ত এক অদ্ভুত ঠাণ্ডা অনুভব করলেন। বাইরের অক্টোবরের রোদ ঘরের ভেতরে ঢুকেই যেন নিস্তেজ হয়ে গেছে। দেয়ালের কোণ থেকে কোণ, ছাদের কাঠের বিম—সবই নিঃশব্দে তাকিয়ে ছিল যেন।
জয়ন্ত ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে লাগলেন। হঠাৎ তার চোখে পড়লো, এক পুরনো আয়না। আয়নার কাঁচ ধুলা ও আঁচড়ে ভরা, কিন্তু তবুও তাতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায়।
কিন্তু সেই প্রতিবিম্বে… রাসেল নেই!
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করুন ডেইলি স্টোরি
৩
জয়ন্ত চমকে গেল। সে ঘুরে রাসেলের দিকে তাকালো—রাসেল তো ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আয়নায়, শুধু জয়ন্ত নিজে!
জয়ন্ত বললো, “তুমি কি আয়নায় তাকিয়েছো?”
রাসেল মাথা নাড়িয়ে বললো, “আমি এসব জিনিসে বিশ্বাস করি না, স্যার। আয়না ওই ঘরের মাঝখানের, যেখানে একবার এক বউ আত্মহত্যা করেছিল। শুনেছি সে এখনও আসে আয়নার ভেতর দিয়ে।”
জয়ন্ত হেসে ফেলে বললেন, “এসব ভূতের গল্প তো মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য বানানো হয়।”
কিন্তু সেই মুহূর্তেই, আয়নার মধ্যে জয়ন্ত দেখতে পেল—একটি নারী মূর্তি তার পেছনে দাঁড়িয়ে, লাল শাড়ি পরে, মাথায় সিঁদুর, চোখে অদ্ভুত শূন্যতা।
সে ঘুরে তাকালো—কেউ নেই।
৪
রাসেল তখন দরজার দিকে এগিয়ে গেছে। জয়ন্ত আবার আয়নার দিকে তাকালো, এবার আর কেউ নেই।
তবে হঠাৎ করেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল প্রচণ্ড শব্দে। ঘরটা যেন কেঁপে উঠলো। আলো নিভে গেল, শুধু আয়নার সামনে এক ফিকে আলো জ্বলতে লাগলো।
জয়ন্ত এগিয়ে গেল, এবং হঠাৎ করে দেখলো—আয়নার মধ্যে সে নিজেকে দেখছে না। বরং সেই নারী, একা দাঁড়িয়ে, চোখ দিয়ে যেন কিছু বলতে চাইছে।
সে বলছে না, সে চাচ্ছে—কারো কিছু জানাতে।
৫
জয়ন্ত যেন আয়নার দিকে চুম্বকের মতো টান অনুভব করলেন। তিনি হাত বাড়ালেন আয়নার কাঁচের দিকে।
ঠিক তখনই, তার কানে ভেসে এলো একটি ফিসফিসে আওয়াজ:
“আমি মরিনি… আমায় এখানে বন্দি করা হয়েছে…”
ঘরের মধ্যে হাওয়ার ঝাপটা উঠে এল। পুরনো জানালা ঠকঠক করে কেঁপে উঠলো। আয়নার কাঁচে ফাটল ধরতে লাগলো।
রাসেল দৌড়ে এসে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। “স্যার! দরজা বন্ধ হয়ে গেছে!”
জয়ন্ত কোনওরকমে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে ছুটলেন। দরজাটা জোরে ধাক্কা দিয়ে খুলে গেল। বাইরে বের হতেই সব থেমে গেল—শীতলতা, বাতাস, ফিসফিস—সব।
৬
দুজনেই চুপচাপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। বাইরে এসে রাসেল বললো, “স্যার, আপনি ঠিক আছেন?”
জয়ন্ত মাথা নাড়লেন, “ওই বাড়ির ভেতর কিছু একটা আছে।”
পরদিন সকালে জয়ন্ত পুরাতন নথিপত্র ঘাঁটতে লাগলেন। তিনি জানতে পারলেন, ১৯৪৭ সালে ওই বাড়ির জমিদারের পুত্র এক তরুণীকে জোর করে বিয়ে করেছিলেন। মেয়েটি আত্মহত্যা করেনি, বরং তাকে হত্যা করে আয়নার মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয় এক তান্ত্রিক ক্রিয়ার মাধ্যমে।
জয়ন্ত বুঝলেন—নারীটি সাহায্য চাইছে। সে মুক্তি চায়, প্রতিশোধ নয়।
৭
পরদিন তিনি একজন স্থানীয় পুরোহিতকে নিয়ে ছায়ার ঘরে ফিরে গেলেন। আয়নার সামনে মন্ত্রপাঠ শুরু হয়।
ঘরের ভেতর আবার সেই ঠাণ্ডা, সেই শব্দ, সেই চাপ।
আয়নায় ধীরে ধীরে সেই নারীমূর্তি স্পষ্ট হলো, কিন্তু এবার সে কাঁদছে না। বরং চোখে যেন প্রশান্তি।
পুরোহিত বললেন, “ওর মুক্তি হয়েছে। এখন ও যাবে।”
আয়নার কাঁচে একটি শেষ ফাটল ধরা পড়ে, তারপর সেটি ধ্বসে পড়ে মাটিতে।
শেষে
জয়ন্ত এরপর আর কখনও ওই বাড়িতে যাননি। তবে শহরের মানুষ বলে, ছায়ার ঘর এখন আর ততটা অন্ধকার মনে হয় না।
আর কেউ বলে, রাতে ওই বাড়ির পাশে গেলে, এক নারীমূর্তি দেখা যায়—চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে আলোর দিকে।