মাইক্রোসফট উইন্ডোজের প্রথম ভার্সন বাজারে আসে ২০ নভেম্বর ১৯৮৫ সালে, যার বাজার মূল্য ছিল ৯৯ ডলার। মূলত ডস বা ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেমের সাথে একটি খুবই সাধারণ গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস দিয়ে চালু হয়েছিল বিল গেটসের জয়যাত্রা। এর দু’বছর পরেই অর্থাৎ ১৯৮৭ সালের ৯ ডিসেম্বর এর দ্বিতীয় ভার্সন ২.০ বাজারে আসে। মাত্র একটি ১.৪৪ মেগাবাইটের ফ্লপিতেও ইন্সটল করা যেত এই অপারেটিং সিস্টেমটি। যার বাজার মূল্য ছিল১০০ ডলার। এই ভার্সনেও গ্রাফিক্সের তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
তিন বছর বিরতির পর ১৯৯০ সালের ২২ মে, বাজারে আসে এর তৃতীয় ভার্সন যার ভার্সন নাম্বার ছিল ৩.০। ৬ মেগাবাইটের উইন্ডোজের মূল্য ছিল ১৪৯ ডলার। এই ভার্সনে এসেই প্রথম সত্যিকারের রঙিন গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেসের দেখার পায় ব্যবহারকারীরা। হাজার ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল উইন্ডোজ 3.0 এর একটি আপডেট ভার্সন বাজারে ছাড়া হয় যার ভার্সন নাম্বার ছিল ৩.১। দাম আগের মতই থাকলেও ও এর সাইজ একটু বেড়ে ১০-১৫ মেগাবাইট করা হয়। ভার্সনটিতে যোগ করা হয় সলিটারি কার্ড গেমসের মতো কিছু ফিচার।
১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসের ২৪ তারিখ বাজারে আসে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া উইন্ডোজ ৯৫। পার্সোনাল কম্পিউটার মানুষের হাতের নাগালে চলে আসা এবং সেই সাথে উইন্ডোজ ৯৫ এর দুর্দান্ত কম্বিনেশন। টুইটার জগতকে আমুল পাল্টে দেয়। মাত্র ৫০ মেগাবাইটে ইন্সটল করা যেত এই ভার্সনটি। যারা আগের ভার্সন ব্যবহার করত তাদের জন্য আপডেট করার জন্য দাম পড়তো ১০৯ ডলারের মত এবং সম্পূর্ণ নতুন কিনলে তার জন্য দাম পড়তো ২০৯ ডলার। এই ভার্সনে প্রথমবারের মত মাল্টিমিডিয়া যুক্ত হয়। internet, সিডির ব্যবহারও পুরোদমে শুরু হয় উইন্ডোজ 95-এ।
১৯৯৮ সালের ২৫ জুন বাজারে আসে গত শতাব্দীতে microsoft এর সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৯৮। যার বাজার মূল্য ছিল ২০৯ ডলার এবং মোট ৫৮ মিলিয়নটি উইন্ডোজ ৫৮ এর লাইসেন্সে বিক্রি করে উইন্ডোজ। এর পরের বছরে ৫ মে ১৯৯৯ সালে কিছুটা আপডেট করে বাজারে আনা হয় উইন্ডোজ ৯৮ স্পেশাল এডিশন যেখানে বাড়তি কিছু সুবিধা দেওয়া হয় ইউজারদের।
২০০০ সালে এই বছরের নামের সাথে মিল রেখে উইন্ডোজ মিলেনিয়াম নামে একটি নড়বড়ে এবং সবচেয়ে বাজে অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনে microsoft। গ্রাফিক্সের কিছুটা উন্নতি করলেও বাগে ভর্তি ছিল উইন্ডোজ মিলেনিয়াম। মজার বিষয় হচ্ছে windows ৯৮ এবং মিলেনিয়ামের সাইজ এবং মার্কেট প্রাইস প্রায় একই ছিল। মানে শুধু রং মেখে নতুন নাম দেওয়া একটি বাজে অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে উইন্ডোজ মিলেনিয়াম। সম্ভবতই ব্যবহারকারীরা এই ভারসনটিকে একরকম প্রত্যাখ্যান করে এবং সময়ের বিচারে এটি মাইক্রোসফটের সবচেয়ে অজনপ্রিয় একটি রিলিজ।
২০০০ সালে উইন্ডোজ আরো একটি অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনে যার নাম ছিল windows 2000। মিলেনিয়াম এর মত এরও বাজার ভয়াবহ খারাপ ছিল।তখনকার সময়ে এর দাম ছিল ৩১৯ ডলার এবং জায়গাও লাগতো উইন্ডোজ ৯৮ এর তুলনায় তিনগুণ বেশি। সেই তুলনায় পারফরম্যান্স খুব বেশি ভালো ছিল না, ফলে মাত্র ২ মিলিয়ন লাইসেন্স বিক্রি হয় উইন্ডোজ ২০০০এর। হঠাৎ করেই ব্যবসায় মার খাওয়ার এক বছর পরেই আবার ঘুরে দাড়ায় মাইক্রোসফট।বাজারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় উইন্ডোজ এক্সপি।
২০০১ সালের ২৫ অক্টোবর দেড় গিগাবাইট জায়গা দখল করা এই নতুন অপারেটিং সিস্টেমটি ভিন্নমাত্রার গ্রাফিক্স দিয়ে ইউজারদের মন জয় করে দেয়। একই সাথে ভিডিও গেমস, এডিটিং, থ্রিডি গ্রাফিক্স এসব বিষয় নিয়ে বাজারে চর্চা হতে শুরু করে। বাজারের অবস্থা বুঝে উইন্ডোজ ২০০০ এর চেয়ে কম দামে অর্থাৎ ২৯৯ ডলারে বিক্রি শুরু হয় উইন্ডোজ এক্সপি,র। যার প্রায় ৪০০ মিলিয়ন লাইসেন্স বিক্রি হয়। উইন্ডোজ এক্সপির বাজত্ব ছিল লম্বা সময় ধরে।
প্রায় ৬ বছর পর উইন্ডোজ বাজারে নিয়ে আসে ভিস্তা নামে একটু অপারেটিং সিস্টেম। গ্রাফিক্সের দিক থেকে চকচকে হলেও মানুষের মনে খুব একটা দাগ কাটাতে পারেনি উইন্ডোজ তিস্তা।তার উপর ১৫ গিগাবাইট এর মত জায়গা নিতো হার্ডডিক্সে এবং দামও ছিল বেশি। উইন্ডোজ ভিস্তার প্রায় ১৮০ মিলিয়ন লাইসেন্স বিক্রি হয় ৩৯৯ ডলার করে।উইন্ডোজ ভিস্তাকেই একটু মডিফাই করে ২০০৯ সালে বাজারে আসে windows 7। যার দাম ভিস্তার চেয়ে একটু কম। সে সময় ৩৩০ মিলিয়ন লাইসেন্স বিক্রি হয় ৩১৯ ডলার করে। windows 7 এই প্রথম ৩২ ও ৬৪ বিটের অপারেটিং সিস্টেমের কথা জনসম্মুখে আসে। ২০১২ সালের ২৬ শে অক্টোবর বাজারে আসে উইন্ডোজ এইট যার বাজার মূল্য অনেকটাই কম ছিল। ১১৯ ডলারই পাওয়া যেত উইন্ডোজ ৮ যার প্রায় ২০০ মিলিয়ন বিক্রি হয়। এর পরের বছর বাজারে আসে উইন্ডোজ ৮.১ যা আসলে বাজারে কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি।
২০১৫ সালের ২৯ জুলাই বাজারে আসে উইন্ডোজের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১০। ১১৯ ডলারের মূল্যে উইন্ডোজ ১০ প্রায় 1. 3 বিলিয়ন লাইসেন্স বিক্রি হয়। ১১৯ ডলার দিয়ে ১.৩ বিলিয়ন কে গুণ করলে ডলারের পরিমাণ কত হয় তা দেখে আপনার চোখ কপালে উঠবে। যার ৬৪ বিটের মোট সাইজ ছিল 20 গিগাবাইট এর মত। এখনো পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্সটল হওয়া অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম স্থান অধিকার করে আছে উইন্ডোজ ১০। মাঝখানে লম্বা বিরতি দিয়ে ২০২১ সালে বাজারে আসে সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ১১। যার সাইজ দিয়ে দাঁড়ায় ৬৪ গিগাবাইটে এবং এখন পর্যন্ত ১৩৯ ডলার করে মোট ৪০০ মিলিয়ন লাইসেন্স বিক্রি হয়েছে উইন্ডোজ ১১ এর।