একবারের কথা একটি সুন্দর ছোট্টো শহরের শান্ত নামের এক ছেলে তার পরিবারের সাথে বাস করতো। বারো বছরের এই ছেলেটা ছিল খুবই চঞ্চল এবং উদ্যমী এবং সেই বাইরে খেলতে খুবই পছন্দ করতো। তার প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল, প্রত্যেকদিন শান্ত কাছে একটা পাবলিক মাঠে যেত ফুটবল খেলতে। একদিন দুপুরে যখন শান্ত স্কুল থেকে বাড়ি এলো, সে তার সোফায় এসে বসল এবং গভীর চিন্তায় ডুবে গেল।সে তার স্কুলের বই খুলল কিছুক্ষণ সেটিকে দেখল এবং পরে আবার সোফার উপর লুটিয়ে পড়ল। তার মুখে কেমন একটা অসন্তোষের ভাব ছিল।তখন তারা বাবা বাগান থেকে ভিতরে আসছিলেন, শান্তের এই অদ্ভূত আচরণ দেখে তিনি তার কাছে এসে বসলেন। তিনি খুব আদরের সাথে জিজ্ঞেস করলেন, কী হয়েছে বাবা ?
দুশ্চিন্তা করছো নাকি? শান্ত বললো, যে সে গণিতের পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছে। কিন্তু আসল সমস্যা এটা ছিল না। সে বলল যে আমার বন্ধু ইমন সব সময়ের মতো এবারও গণিতে ভালো নম্বর পেয়েছে। আর আমি এত চেষ্টা করেও তার মত ভাল করতে পারিনি। এই কথা শুনে শান্তর বাবা কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। ছেলের দুঃখে তার মনটাও একটু ভারী হয়ে গেল। ছেলেটির বাবা এক গ্লাস পানি নিতে গেলেন যাতে তিনি তার ছেলেকে শান্ত করতে পারবেন। যখন শান্ত একটু আরাম অনুভব করতে লাগলো, তখন তার বাবা তাকে তাদের বাগানের সুন্দর পরিবেশটাতে নিয়ে গেলেন। তার বাবা শুরু করলেন শান্ত আজ তুমি যা অনুভব করছো তা থেকে আমি তোমাকে তিনটি গুরুত্বপূর্ন শিক্ষা শেখাতে চাই। এগুলি সেই শিক্ষা যা তোমাকে জীবনভর দিক নির্দেশনা দেবে। শান্ত তার বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রাখতো কিন্তু সে একটু চিন্তিত ছিলো এবং একই সাথে কিছুটা উৎসাহিত ছিল। সেগুলি কী শিক্ষা?
তুমি প্রতিটি শিক্ষায় এক এক করে শিখবে এবং প্রতিটির জন্য আমি তোমাকে একটি চ্যালেঞ্জ দেব। একটু পর তিনি বললেন, প্রথম শিক্ষার জন্য আমি চাই যে তুমি কাল ইমনকে ফুটবল খেলতে আমন্ত্রণ জানাও। শান্ত মাথা নারল কিন্তু ভাবতে লাগলো তার বাবা তাকে কি শেখাতে চান? পরের দিন সকালের আবহাওয়া টা ছিল খুবই সুন্দর এবং শান্ত স্কুলের জন্য উৎসাহিত হয়ে বেরিয়ে গেল। দুপুরে যখন স্কুল শেষ হলো সে ইমনকে ফুটবল খেলতে ডাকল। যেমনটি সাধারণত হয়ে থাকে । শান্ত প্রতিদিন ফুটবল খেলতো বলে ওইদিনও ফুটবল ম্যাচে অসাধারণ পারফর্ম করছিলো। সে তিনটি গোল করলো এবং তার দলকে জয়ী করলো আর ইমনের ফুটবলের তেমন বেশি অভিজ্ঞতা ছিল না। তবুও সে চেষ্টা করছিলো কিন্তু সে প্রায়ই বল মিস করে। তবু ওই দিন সবাই ফুটবল খেলা উপভোগ করছিলো। পরে শান্ত তার বাবার সাথে দেখা করতে দৌড়ে বাগানে পৌঁছালো। বাবা আমি আজ ইমনের সাথে ফুটবল খেলেছি। এখন আপনি আমাকে জলদি প্রথম শিক্ষাটা শেখান।
তার বাবা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার খেলা কেমন ছিল? শান্ত সবকিছু বিস্তারিত বলল, তার তিনটি গোল করা থেকে শুরু করে ইমনের ফুটবলের কিছু করতে না পারার কথা পর্যন্ত। তার বাবা মাথা নাড়িয়ে বললেন, খেয়াল করো শান্ত। ইমন ফুটবলে ভালো নয়, কিন্তু সে গণিতে খুব ভালো। ঠিক যেমন তুমি গণিতে দুর্বল, কিন্তু ফুটবলে খুব ভালো। আমরা সকলেই আলাদা এবং এটাতে খারাপ বা দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। প্রত্যেকেরই নিজস্ব গুণ এবং পছন্দ থাকে। শান্ত তার বাবার কথা বুঝতে পারলো এবং অনুভব করল যে সবাই আলাদা এবং এটি কোনও খারাপ বিষয় নয়।