আবুল হায়াতের জীবনের গল্প। বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত। তিনি একাধারে অভিনেতা, নাট্যনির্দেশক ও নাট্যকার। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলা নাটকের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। আর এই জনপ্রিয়তার পেছনে যে কয়েকজন গুণী নাটক নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পী ছিলেন, তাদের মধ্যে আবুল হায়াত অন্যতম। আজ পর্যন্ত তার অভিনয়ের জাদুতে দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছেন। আবুল হায়াতের পরিবারের পূর্বনিবাস ছিল ভারতের মুর্শিদাবাদে। আবুল হায়াত এর বাবার নাম ছিল আব্দুস সালাম। ১৯৪৭- এর দেশভাগের সময় স্ত্রী ও তিন বছরের ছোট্ট সন্তান আবুল হায়াতকে নিয়ে চট্টগ্রামে পাড়ি জমান আব্দুস সালাম।
তখন থেকে চট্টগ্রামের মাটিতেই বেড়ে ওঠা আবুল হায়াত। বাবা আব্দুস সালামের ছিলেন মঞ্চ নাটক দেখার নেশা। সময় পেলেই ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন নাটক দেখতে। সেই থেকেই অভিনয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আবুল হায়াতের মঞ্চ নাটকের অভিষেক হয়ে যায় মাত্র ১০ বছর বয়সেই। তার নাটকের নাম ছিল টিপু সুলতান। নাটকে আগ্রহ থাকলেও লেখাপড়ায় আবুল হায়াত ছিলেন দারুন মেধাবী। আবুল হায়াত চট্টগ্রাম কলেজিয়েট ও রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন।
১৯৬২ সালে দেশ সেরা বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন তিনি। ১৯৬৭ সালে পাশ করে পরের বছরেই ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী পদে চাকরি জীবন শুরু করেন। প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু হলেও অভিনয়ের প্রতি ছিল তার মূল আকর্ষণ। ১৯৬৮ সালের এক দিন তিনি জানতে পারেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় গ্রুপ থিয়েটারের একটি নাটক তৈরি হবে, টেলিভিশনে দেখা হবে। আমেরিকা থেকে নাট্যনির্মাণের উপর মাস্টার্স করে আসা জিয়া হায়দার সেই নাটকের নির্দেশনা দিবেন। নাটকের নাম ইডি পাস। এই ইডি পাস এর মাধ্যমেই টেলিভিশনে নাটকের যাত্রা শুরু করেন আবুল হায়াত। সেই থেকে আজ অব্দি প্রায় হাজার খানিক নাটকের নিজের অভিনয় প্রতিভার নিদর্শন দেখিয়েছেন এই অভিনেতা।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেননি আবুল হায়াত। ১৯৭২ সালে সুভাস দত্তের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আগমন করেন। প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ‘র প্রথম সিনেমা কিয়ামত থেকে কেয়ামত-এ বড় মির্জা চরিত্রে অভিনয় করেন আবুল হায়াত। এরপর অল্প কিছু ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৭ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও ১৯৯৯ এবং ২০১১ সালে তিনি মেরিল- প্রথম আলোর পুরস্কার অর্জন করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখিতেও বেশহাত এই গুণী শিল্পী। এসো নীপবনে নামে প্রথম আলো পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখতেন তিনি।
১৯৯১ সালের বইমেলায় তার প্রথম বই আপ্লুত মরু প্রকাশিত হয়। এরপর একে একে লিখেছেন আরো বেশ কিছু বই।