নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত আমলগুলি ইসলামী জীবন যাপনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। সুন্নাহ অর্থ হলো নবীজি (সা.) এর জীবন আচরণ, তার কথা কাজ এবং আচরণ যা মুসলমানদের জন্য আদর্শ। নবীজির সুন্নাহ মেনে চলা ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নবীজির কিছু সুন্নত আমলের বিশদ বিবরণ দেওয়া হল:
১) তাহারাত (পবিত্রতা): তাহারাত বা পবিত্রতা রক্ষা করা সুন্নাহর একটি গুরুত্বপূর্ন দিক। নবীজি (সা.) সবসময় নিজেকে পবিত্র রাখতেন বিশেষত, নামাজের আগে ওজু করা, খাবারের আগে ও পরে হাত ধোয়া, এবং ঘুমানোর আগে পবিত্র হয়ে ঘুমানো সুন্নাহ। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম)। …ওজুর সুন্নত: ওজুর আগে বিসমিল্লাহ বলা।– তিনবার মুখ ধোয়া।– তিনবার নাক পরিষ্কার করা। –সম্পূর্ণ শরীরের অংশগুলো ভালোভাবে ধোওয়া।
২) দৈনন্দিন আচরণ: নবীজি (সা.)- এর দৈনন্দিন জীবন ছিল অত্যন্ত সুশৃংখল ও শৃঙ্খলা অনুযায়ী। তিনি তার খাবার, ঘুম এবং কাজ সবই নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী করতেন। তিনি প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় করতেন এবং দিনের শুরুতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন।…… খাবার খাওয়ার সুন্নত: ডান হাতে খাওয়া ।– খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোওয়া।– খাবার গ্রহণের আগে বিসমিল্লাহ খাবারের দেওয়া পাঠ করা। –খাবার খাওয়ার পরে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
৩) ইবাদত ও নামাজ: নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। নবীজি (সা.) নিয়মিতভাবে পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন এবং অতিরিক্ত নফল নামাজও আদায় করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজও ছিল তার প্রতিদিনের ইবাদতের অংশ। নামাজের সুন্নত: আজানের উত্তর দেওয়া। –নামাজের মনোযোগী থাকা–সঠিক নিয়মে –রুকু ও সিজদা করা।
৪) আখলাক (আচরণ ও নৈতিকতা): নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন শ্রেষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী। তিনি দয়া, ও ক্ষমাশীলতা ধৈর্য এবং বিনম্রতার উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি সব সময় অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করতেন এবং কাউকে কোন কষ্ট দিতেন না। মিষ্টিভাষী হওয়া, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের ভালোবাসা এবং প্রতিবেশীর হক আদায় করা ছিল তার সুন্নত। আচরণের সুন্নত: বিনয়ী ও মার্জিত থাকা- মানুষকে সাহায্য করা- সদয় আচরণ করা- উত্তম কথা বলা।
৫) ঘুমানোর সুন্নত: নবীজি (সা.) ঘুমানোর আগে কিছু বিশেষ মুহূর্ত পালন করতেন এবং ঘুমানোর আগে তিনবার সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করতেন। তিনি পবিত্র হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ঘুমানোর আগে সুন্নত: ডান কাতে শুয়ে ঘুমানো- ঘুমানোর আগে মিসওয়াক করা- ঘুমের আগে অজু করা।
৬) মিসওয়াক করা: মিসওয়াক করা নবীজি (সা.) -এর একটি প্রিয় সুন্নাত। তিনি বলেছেন, যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হতো তবে আমি তোমাদের প্রতি নামাজের আগে মিসওয়াক করতাম আদেশ দিতাম (বুখারি)। মিসওয়াক দাঁত পরিস্কার রাখে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
৯) দু’আ ও জিকির করা: নবীজি (সা.) সবসময় আললাহর কাছে দু;আ করতেন। তিনি প্রতিটি কাজের আগে এবং পরে দু’আ করতেন এবং জীবনে প্রতিটি কাজে আল্লাহর নাম স্বরণ করতেন। যেমন ঘুম থেকে ওঠার পরে , খাবার খাওয়ার পরে, বাথরুমে যাওয়ার আগে ও পরে।নবীজি (সা.) সকাল সন্ধ্যায় জিকির করতেন এবং নিয়মিতভাবে ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন।
১০) রোজা রাখা: রমাজানের রোজা ইসলামের গুরুত্বপূর্ন ফরজ ইবাদত।তবে, নবীজি (সা.) বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও নফল রোজা রাখতেন, বিশেষত সোমবার ও বৃহস্পতিবার। তিনি বলেছেন, সোমবারও বৃহস্পতিবার রোজা রাখলে সপ্তাহব্যাপী পাপগুলি ক্ষমা করা হয়। (তিরমিজি)।