কেমন ছিল ২০২৪ সালের জুলাইয়ের সেই দিনগুলো। এক বছর পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়। সব কিছুর শুরুটা হয়েছিল ২০২৪ সালের ৫ জুন, যখন হাইকোর্ট এক রায়ে সরকারী চাকরিতে ৩০% মুক্তিযুদ্ধ কোটা পূণবহালের নির্দেশ দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তারা একটি বৈষম্য মূলক ও অন্যায্য হিসেবে উল্লেখ করে স্বেচ্ছার হতে থাকেন। তবে ঈদের ছুটির কারণে সেটায় সাময়িক বিরতি চলে আসে। এরপর পহেলা জুলাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিন থেকেই আন্দোলন ফিরে আসে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে। in short
শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি প্লাটফর্ম গঠন করেন। যা দ্রুতই জাতীয় আন্দোলনের রূপ নেয়। নেতৃত্বহীন কাঠামো এবং সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে নতুন ধারার গণ সংগ্রাম। ৪ জুলাই আপিল বিভাগ কোটা ইস্যুতে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। তাই পরদিন থেকে শুরু হয় ব্যাপক বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি। ৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘোষণা আসে বাংলা ব্লকেট কর্মসূচির যা ৭ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। এই কর্মসূচির আওতায় সারা বাংলাদেশ সড়ক ও রেলপথে অবরোধ তৈরি হয়, চিন্তায় পড়ে যায় আওয়ামী লীগ সরকার। in short
যে কারণে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন দমাতে দলটির নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়। ১০ জুলাই আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায়ের ওপর স্থিতা অবস্থা জারি করে , কিন্তু তাতেও আন্দোলন থামানো যায়নি। অবশ্য তখনও শেখ হাসিনা এসব পাত্তা দেননি। আর এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়, ১৪ জুলাই হাসিনার একটি বক্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। সে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক প্রভাস আমিনের তৈলাক্ত বক্তব্যের যেভাবে বলে বসেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতিপুতিরা কেউ মেধাবী নয়, যত রাজাকারের বাচ্চারা মেধাবী। এই বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। in short
১৫ জুলাই ঢাবিতে ছাত্রলীগের হাতে বহু শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর ঢামেকে আহতদের ওপর আবারো চড়াও হয় ছাত্রলীগ। একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আরো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, যার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। সেদিন টাই ছিল কোটা আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। রংপুড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বুক প্রসারিত করে প্রাণ বিলিয়ে দেন আর তাকে গুলি করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। in short
এরপর পরপরই জনতার ক্ষোভ অগ্নিগর্ভা হয়ে ওঠে। ওই রাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধু ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু তাতে আন্দোলন থামেনি বরং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বের করে দেন, ঘোষণা করেন রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। ১৭ ও ১৮ জুলাই আন্দোলনে যুক্ত হন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও । ঢাকা শহর তখন রূপ নেয় এক রণক্ষেত্রে। সেদিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে আন্দোলনের জোয়ার ঘটে, অন্যদিকে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারাতে থাকে একের পর এক মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বন্ধ করে দেয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। শেষমেশ জারি হয় কারফিউম। in short
সেনাবাহিনী নামের রাস্তায় কিন্তু এত কিছুর পরেও শিক্ষার্থীরা হাল ছাড়েনি। বরং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আন্দোলনের যোগ দিয়ে এটিকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে জুলাই পার হয়ে যায়, কিন্তু প্রতিবাদের এই ঢেউ থামেনি। ৩ আগস্ট শহীদ মিনারের সমাবেশে ঘোষণা আসে সরকার পতনের এক দফা। চার আগস্ট ঘোষিত হয় মাস্ট টু ঢাকা কর্মসূচি, যা একদিন এগিয়ে এনে নির্ধারণ করা হয় ৫ আগস্ট। এটা সেই দিন যা বিবেচিত হয় ৩৬ জুলাই হিসেবে। ওই দিনেই লাখো মানুষ ঢাকায় সমবেত হয়, পথে নামের প্রাণের ভয় উপেক্ষা করে। বিপদ বুঝতে পেরে সেদিন দুপুরের আগেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যায়। বছর ঘুরে জুলাই আবারও এসেছে, ফিরে এসেছে প্রতিরোধ, ও বিজয়ের সেই স্মৃতিগুলো। in short
আরও পড়ুন গনভবন যেভাবে দখল করেছিলেন শিক্ষার্থীরা
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল