ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীর উপর যে প্রভাব পরে তা ইতিহাসে স্বরণীয় । পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই রাজশাহীতে ভাষার প্রশ্নটি জনগণের সামনে চলে আসে। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলাকে পরিষদের ভাষা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হলে ঐদিনই শহরের ভুবন মোহন পার্কে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা থেকে বহু ছাত্রদের স্বাক্ষর যুক্ত একটি স্মারকলিপি পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এক মার্চ এবং ১১ই মার্চ হরতাল পালিত হয়। হরতালের সমর্থনে ছাত্রদের মিছিলে মুসলিম লীগের ভাড়াটে গুন্ডারা হামলা চালায়। এ সময়ে রাজশাহী কলেজ ছিল সকল আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। মোহাম্মদ আবুল হাই, ড.এনামুল হক, ড. গোলাম মকসুদ হিলালি আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। স্থানীয় ছাত্রদের মধ্যে কাশেম চৌধুরী, গোলাম রহমান, গোলাম তাওয়াব, একরামুল হক, নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান শেলী, কাসিম উদ্দিন আহমেদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
পরবর্তী পর্যায়ে এদের অনেককেই গ্রেফতার করলে কিংবা ঢাকা চলে গেলে এস এ বারী, গোলাম আরিফ টিপু, আহমদুল্লাহ চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী,এস এম এ গাফফার, মহসীন প্রামানিক, হাবিবুর রহমান প্রমুখ নেতৃত্বে আসেন। ১৯৪৯-৫১ পর্যন্ত সময় ভাষার প্রশ্নে আন্দোলন আরো তীব্র বের হয় । ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস ও ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি তমুদ্দিন মজলিসের ঢাকার নেতৃবৃন্দ রাজশাহীর ভুবনমোহন পার্কে এক জনসভা করেন। এ সভায় রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহ থেকে বিপুল লোক সমাগম হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি দিনভর হরতাল চলে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ভুবন মোহন পার্কে সভা হয়। শভা চলাকালে খবর আসে যে ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার সংবাদ ঐদিন সন্ধ্যায় রাজশাহী এসে পৌঁছালে সচেতন ছাত্ররা একে এক রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেলে জমায়েত হতে থাকে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্ররাও ডা. এস, এম, এ গাফফারের নেতৃত্বে মেডিকেল কলেজে এসে উপস্থিত হয়। উপস্থিত ছাত্ররা এস এম, গাফফার এবং যুগ্ন আহবায়ক হলেন রাজশাহী কলেজের গোলাম আরিফ টিপু এবং হাবিবুর রহমান (নাটোর)। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন রাতে রাজশাহী কলেজের নিউ হোস্টেল প্রাঙ্গণের সামনে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল।