মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষীকা মেহেরীন

মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষীকা মেহেরীন…..মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষীকা মেহেরীন… যিনি নিজের জীবনকে বাজি রেখে ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাণ বাচিয়েছেন…তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে শিক্ষাথীদের বাচাতে গিয়ে নিজে নিহত হয়েছেন…

মাইলস্টোন স্কুলের এই শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন একেবারেই মায়ের মত। নিজের জীবনের পরোয়া না করে তিনি শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। অন্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার এই এই বিশাল হৃদয় তো তিনি পরিবার থেকেই পেয়েছেন।

শিক্ষিকা মেহরিন সম্পর্কে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাতিজি। এমন উঁচু বংশ মর্যাদা আর বনেদি ঘরের সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। মাইলস্টন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উঠে আসছে অনেক হৃদয়বিদারক কাহিনী।

সেই ঘটনার মধ্যে শিক্ষিকা মেহরিন এক সাহসিকতার প্রতীক। তিনি একজন নারী, শিক্ষা ও একজন মা। নিজে অগ্নিকাণ্ডে ঝলসে গিয়েও শিক্ষার্থীদের কে বলেছিলেন, দৌড়াও ভয় পেয়ো না আমি আছি।

বিমান দুর্ঘটনায় মুহূর্তেই যখন চারদিকে অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাচ্চারা চিৎকার করছিল। সবাই যখন দৌড়ে পালাতে চাইছিল, মেহেরিন ছুটে গিয়েছিল শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে ওই অবস্থাতেই তিনি শ্রেণীকক্ষ থেকে একে একে বিষ শিক্ষার্থীকে বের করেছিলেন। কিন্তু একজন একজন করে বের করে আনতে আনতে তার নিজের অবস্থা আরো বেশি খারাপ হচ্ছিল।

আরও পড়ুন..শহীদ আবু সাইদের বেড়ে ওঠার গল্প ও তার জীবনি !

একপর্যায়ে তার শরীরের ৮০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজন সেনা সদস্য বলেন, ম্যাডাম ভিতরে ঢুকে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে বের করে দিয়েছেন, তারপর উনি আর বের হতে পারেন নাই। পরে সাহসী এই শিক্ষিকাকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়।

লাইভ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলেন মেহেরিন। কিন্তু সে কথা শেষ কথা ছিল। তারপর সবাইকেই কাঁদিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মেহেরিনের প্রতিদিনের কাজ হল স্কুল ছুটির পর শিশুদের হাত ধরে গেট পার করানো।

ঘটনার দিন চাইলে তিনি নিজে নিরাপদে থাকতে পারতেন। কিন্তু শিক্ষিকা পরিচয় ভুলে এদিন তিনি মায়ের ভূমিকা পালন করছিলেন। পেশাগত কারণে ঢাকায় বসবাস করলেও মেহেরিনের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে।

নীলফামারীর জল ঢাকা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বগুলায়ালী চৌধুরীপাড়া গ্রামে তার জন্ম। তার বাবা ছিলেন মরহুম মুহিত চৌধুরী বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আপন চাচাতো ভাই।

আওয়ামী লীগের আমলে যখন কেউ বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে যাওয়ার সাহস পেত না, মেহরিন তখনও সেখানে যেতেন। তবে তিনি এগুলো গোপন রাখতেন। কারণ তার ও তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি’র সুধীনে কখনো সামনে যাননি।

বনেদি পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি খুবই সাদামাটা ভাবে চলাফেরা করতেন। সুবিধা নেয়ার মানসিকতা ছিল না বলেই হয়তো সাধারণ এক স্কুল টিচার হিসেবে জীবন কাটিয়ে গেছেন। নিজে শিক্ষা জীবনেও মেহেরিন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।

তিনি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স করেছিলেন। পেশাগত ভাবে মেহেরিন মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের বাংলা মিডিয়ার শাখার তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর কো-অর্ডিনেটর ছিলেন।

সম্প্রতি গ্রামের বগুলাগাড়ি স্কুল এন্ড কলেজে উন্নয়নমূলক কাজের স্বপ্ন নিয়ে তিনি সেখানে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। অথচ আজ সেই গ্রামের শোকের ছায়া। ভেঙে পড়েছেন মেহেরিনের স্বামী মনসুর হেলাল।

তাদের সংসারে দুইটা ছেলে সন্তান আছে। পৃথিবী ছাড়ার আগে বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন মেহেরিন। গত কয়েক বছরে প্রথমে তার বাবা এবং পরে তার মা ও মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সকল ভাই বোন বরাবরই মেহেরিনকে অভিভাবক হিসেবে মানতেন।

আমাদের ইউটিউব ও ফেসবুক চ্যানেল @dailystory0.5

Leave a Comment