মাছের পেট কেটে বের করা এক জোড়া হলুদ রঙের এই ডিমের দাম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এগুলোই কিশ্বের অন্যতম দামি ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত মুলেট মাছের ডিম। চীন ও দক্ষিণ করিয়ায় জনপ্রিয় এই মাছ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পরিচিত পার্শে মাছ বলে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এই মাছ বেশ সস্তা হলেও চায়না ও দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই মাছ ও ডিম এতটা জনপ্রিয় যে শুধু মাত্র মুলেট মাছের ডিমের জন্যই গড়ে উঠেছে বিশাল এক লাভজনক শিল্প। তবে কাঁচা অবস্থায় নয়। মাছের ডিমের এই থলিকে অনেকগুলো ধাপে প্রক্রিয়াজাত করার পরই এই মাছের ডিম হয়ে ওঠে অত্যন্ত দামি ও সুস্বাদু একটি খাবার।
মুলেট বা পার্শে মাছ ট্রাক থেকে মেঝেতে ঢালার পর প্রথমেই ধারালো ছুরি দিয়ে ছিড়ে ফেলা হয় মাছগুলোর পেট। এর পর অন্য একজন কর্মী খুব সাবধানতার সাথে মুলেট মাছের পেট থেকে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ডিম বের করে আনে। যা দেখতে অনেকটা আমাদের পরিচিত ইলিশ মাছের ডিমের মতই। ডিমগুলো এতটাই সতর্কতার সাথে বের করা হয় যেন , কোনোভাবেই ডিমের থলি ফেটে না যায়।ডিমের থলি ফেটে গেলে পুরো ডিমটাই বিক্রির অনুপযোগী হয়ে যাবে। ডিম বের করার পাশাপাশি মারে পেটে থাকা পটকা আলাদা ভাবে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করেন তারা। এরপর সংগ্রহ করা ডিমর থলিগুলো খুবই সাবধানে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে রক্ত এবং কিউকাস বা পিচ্ছিল অংস সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর সুতা দিয়ে থলির এক অংশ শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয় যেন থলি থেকে ডিম বের না হয়ে যায়।
পরের ধাপে পুরো ডিমের থলিটি লবণের প্রলেপ দেওয়া হয়। লবণ ডিমের ভেতরের পানি টেনে নিয়ে শক্ত একটি টেক্সচার তৈরি করে। লবণ দেওয়ার পর ডিমগুলো কাঠের তক্তার উপরে সাজিয়ে তার উপর ভারী কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া হয় যেন ডিম থেকে পানি বের হয়ে যায়। এতে করে ডিম দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে চাপা দিয়ে সাধারণত ১২-২৪ ঘন্টা লবণ দিয়ে রাখা হয় মুলেট মাছের ডিমের থলি। পানি ঝরে গেলে ডিমগুলো ৭-১০ দিন রোদে শুকানো হয়। সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে গ্যাসের আগুনে ডিমের থলিগুলোকে হালকা তাপ দিয়ে গ্রিল করা হয়। এরপর পাতলা করে কেটে অনেকটা চকলেটের মতই প্যাকেট করা হয় মুলেট মাছের ডিম। এছাড়া সম্পূর্ণ ডিমও প্যাকেটে করা হয়। শুকনো মুলেট মাছের ডিম পাতলা করে কেটে লেবু বা অলিভ অয়েলের সাথে পরিবেশণ করা হয়। হালকা গ্রিল করে অ্যাপেটাইজার হিসেবে পাস্তার উপর ছিটিয়ে অথবা ডুবো তেলে ভেজেও খাওয়া হয় এই ডিম।