যিনা করার ভয়াবহ শাস্তি। ইসলামে যিনা (অবৈধ যৌন সম্পর্ক) একটি গুরুতর পাপ হিসেবে বিবেচিত। কুরআন এবং হাদিসে এ ধরনের কার্য কলাপের ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।ইসলামিক বিধান মতে,যিনা করা মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনে। এই অপরাধকে ইসলামিক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শাস্তি অত্যন্ত কঠোর। কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি: যিনাকে বড় ধরনের গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এটি সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ বলেন: আর তোমরা ব্যভিচারের (যিনা) ধারের -কাছে যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ এবং অত্যন্ত খারাপ পথ, (সূরা আল-ইসরা:৩২)। এই আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, শুধু যিনা করা নয়, এর কাছাকাছি যাওয়া বা এর সম্ভাবনা তৈরি করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞা মানব সমাজকে সুস্থ ও পবিত্র রাখার জন্য আরোপ করা হয়েছে। যাতে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং পারিবারিক বন্ধন অক্ষুন্ন থাকে।
হাদিসে যিনার শাস্তি: রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদীসে যিনার শাস্তি সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি যিনা করে, সে ঈমানদার থাকে না, (মুসলিম:১০০)। এই হাদীসের মাধ্যমে বোঝা যায়, যিনা করলে ঈমান দুর্বল হয়ে যায় এবং আল্লাহর নিকট থেকে দূরে সরে যায়। যারা অবিবাহিত অবস্থায় যিনা করে তাদের শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত, আর বিবাহিত ব্যক্তির শাস্তি হচ্ছে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড। ইসলামী আইন অনুযায়ী, যিনার শাস্তি দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। যারা অবিবাহিত অবস্থায়এই অপরাধ করে, তাদের ১০০বেত্রাঘাত করা হয় আর বিবাহিত অবস্থায় যিনা করলে শাস্তি আরও ভয়াবহ তা হল রাজম অর্থাৎ পাথর ছুড়েঁ মৃত্যুদন্ড দেওয়া।এই শাস্তি কেবল তখনই কার্যকর করা হয় যখন নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন: চারজন সাক্ষী যিনার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে হবে, অথবা অপরাধী নিজে স্বীকার করবে।
আখিরাতের শাস্তি: দুনিয়ার স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আখেরাতেও যিনার জন্য ভয়ানক শাস্তির কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন ব্যভিচারী ব্যক্তি এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে তার মুখ থেকে আগুন বের হবে এবং তার পায়ের নিচ থেকে মাটি ধসে যাবে, (তিরমিজি)। এছাড়া যিনাকারীদের জন্য দোজখের ভয়াবহ স্বাস্থ্যের বর্ণনাও রয়েছে। দোজখের আগুনে তাদের পোড়ানো হবে এবং তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে শাস্তি ভোগ করবে।
যিনার সামাজিক প্রভাব:যিনা শুধু ব্যক্তিগত পাপ নয়, এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যিনা সামাজিক অবক্ষয়,বিবাহবহির্ভূত সন্তান জন্ম, পরিবারের অশান্তি এবং সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায় । একটি সমাজে যিনা বেড়ে গেলে, সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয় এবং ফলের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়।
পরিত্রাণ:যিনার মতো বড় পাপ থেকে বাচাঁর জন্য ইসলামের তওবার পথ খোলা রাখা হয়েছে। আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু এবং ক্ষমাশীল। কেউ যিনা করার পর আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ না করার প্রতিজ্ঞা করে তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কারীদের ভালবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন, (সূরা বাকারা:২২২)।