যে সব দেশ শক্তিশালী হয়েও শান্তিপূর্ণ……যে সব দেশ শক্তিশালী হয়েও শান্তিপূর্ণ সেসব দেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…..
কিছু দেশ আছে যারা খুব শক্তিশালী হলেও কখনো অন্য দেশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান না। যেমন সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ও ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলো কখনোই লড়াই সংঘাতে লিপ্ত হন না। এ দেশগুলো অন্য ব্যাপারে নাক গলার না।
সুইজারল্যান্ড:
তালিকার প্রথমেই আসবে সুইজারল্যান্ড এর নাম কারণ যোগ্যতা ও সক্ষমতার বিচারে ইউরোপে সুইস সেনাবাহিনীর অবস্থান উপরের দিকে। দেশর ভৌগোলিক পরিবেশ ও সকল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিবেচনায় দেশকে রক্ষা করতে যে পরিমাণ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী প্রয়োজনম, সুইজদের সেটা আছে। এটা ন্যাটো জোটের অংশ না হয়েও আধুনিক সমরাস্রে বেস সজ্জিত দেশটি। সুইসদের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও শত্রুপক্ষ দেশটিতে এসে সুবিধা করতে পারেনি। সুইজারল্যান্ডে অনেক গোপন ও নিরাপরদ বাঙ্কার রয়েছে। এত কিছুর পরেও দেশটি কখনো ঝামেলায় জড়ায় না। নিজেদেরকে নিরপেক্ষ রাখা এই নীতি তারা নিয়েছিল ১৭৮৩ সালে প্যারিস চুক্তির মাধ্যমে। ১৫১৫ সালের সুইস কনফেডারেসি ম্যারিগন্যানোর লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হয়। এর ফলে সুইচ কনফেডারেসি ভেঙ্গে যায় এবং তারা সম্প্রসারণ নীতি থেকে সরে আসে। এরপর থেকেই তারা নিজেদের স্বার্থেই নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
অস্ট্রেলিয়া:
শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে অস্ট্রেলিয়ার নামটা উঠে আসে। দক্ষতা ও যোগ্যতা অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্য অনেক দেশের চেয়ে ঢের এগিয়ে। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উত্তেজনায় টিকে থাকতে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের সামরিক শক্তি আরও বাড়িয়েছে। তবে এটা শুধু নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। পশ্চিমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেও অস্ট্রেলিয়াকে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সরাসরি নাক গলাতে দেখা যায় না। পারলে তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে, মধ্যস্থতায় অংশ নেয়।
এশিয়াতেও এমন কিছু দেশ আছে।
ইন্দোনেশিয়া:
আশ্চর্যজনকভাবে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। বিশ্ব ব্যাংকিংয়ে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ১৩ তম। জনসংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম এই মুসলিম দেশগুলোর সেনা সংখ্যা আট লাখ। ২০১৮ সালে দেশটির প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৭.৬ বিলিয়ন ডলার, যা অনেক দেশের কাছে স্বপ্নের মত। ইন্দোনেশিয়া ধীরে ধীরে সামরিক সরঞ্জাম আমদানিকারক দেশ থেকে রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হচ্ছে। নিজেরাই তৈরি করছে অত্যাধুনিক সাবমেরিন। তবে এত শক্তিশালী হলেও এই দেশটিতে কখনো সংঘাতের লিপ্ত হতে দেখা যায় না। ইন্দ্রোনেশিয়া নিজেদের মতো চলছে, ধীরে ধীরে আরো উন্নত হচ্ছে।
মালেশিয়া:
সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ টি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়ার অবস্থানে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তারা আছে দশম স্থানে।মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে বদলে যাওয়া মালয়েশিয়ার সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীরও যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে দেশটিতে তেমন আঞ্চলিক কোন উত্তেজনায় দেখা যায় না। শক্তিমত্তাই এগিয়ে থাকলেও তারা শান্তির পথেই হাঁটছে।
ফিনল্যান্ড:
ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ড ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানের জন্য পরিচিত, যদিও বর্তমানে দেশটি ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত। ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিয়েছিল নিজেদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা চিন্তা করে। তবে এই জোটে ঢুকায় তাদের সামরিক শক্তি বহুগুণ বেড়েছে। ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৫ লাখ। দেশটিতে সামরিক বাহিনীতে ডাক পড়লে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। জনসংখ্যার অনুপাতে দেশটির সামরিক বাহিনী বেশ বড়. এবং বেশ প্রশিক্ষিত। দেশটির জরুরী সেনার সংখ্যা দু লাখ আশি হাজারের মতো বলে অনুমান করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক ঝামেলাগুলোতে ফিনল্যান্ডকে খুব একটা দেখা যায় না।
সুইডেন:
আরো একটি দেশ সুইডেনের সামরিক ক্ষমতা ফিনল্যান্ডের তুলনায় অনেকাংশ কম। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেটা যথেষ্ট। সবচেয়ে বড় বিষয় সুইডেনের বর্তমানে ন্যাটো জোটের সংখ্যা অসংখ্য। তাদের সৈনিক সংখ্যা ৫৭ হাজার। ২০১৮ সালের সুইডেনের সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়। এতদিন বছরে ৬ হাজার মানুষের ডাক পড়ে সামরিক বাহিনীতে। ২০২৫ সাল হতে এটি বাড়িয়ে আট হাজার করা হয়েছে। এত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণ হলো নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার রাখা। সুইডেন কে অযথা অন্য দেশের ঝামেলায় জড়াতে দেখা যায় না।
সারা বিশ্বে যখন আধিপত্যের খেলা চলছে তখন এই দেশগুলো শক্তিশালী হলেও শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন ইন্ডিয়ান আর্মিদের বেতন কত?
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল @dailystory0.5