(১)আতঙ্কের আরেক নাম রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে মারাত্মক আতঙ্কজনক হয়ে গেছে সাপটি। পাকা ধান গাছের সোনালী রঙের সঙ্গে মিলে ধানের গোড়ায় বসে থাকে ঘাপটি মেরে। কাছে গেলেই দেয় ছোবল। এর প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে রাজশাহী, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ঢাকাসহ বা অন্য কোন দিন অন্য কোন জেলা থেকে আসে এমন খবর।
(২)এই সাপের ছোবল ভয়ংকর, রক্তে একবার বিষ ছড়িয়ে পড়লে সর্বনাশ। মৃত্যুই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত। ইংরেজিতে সাপটির নাম রাসেলস ভাইপার এর বাংলা নাম বাংলায় বলে চন্দ্রগোড়া। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের মানুষ ভাবতেন এদেশে এটি বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে এদের আনাগোনা। গত মাসে পদ্মা নদীর তীরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাকিনুর রহমান সাব্বির। হুট করে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপসাব্বিরকে কামড় দেয়।
(৩)দ্রুত তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্ধুরা। অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় আইসিইউতে। পরদিন সাব্বির আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর কয়েকদিন আগে মাঠে ধান কাটতে গিয়ে সাপের ছোবলের শিকার হন কৃষিশ্রমিক সামায়ন কবির। তাকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসে বাঁচানো যায়নি। ২০১৮ সাল থেকে মাত্র পাঁচ বছরে শুধু রাজশাহী অঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের আক্রমণে হাসপাতালে আসেন ২০২ জন। বাঁচানো যায়নি ৬২ জনকে।
(৪)রাসেলস ভাইপার সাপটি দেখতে অনেকটা অজগরের বাচ্চার মত। ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতে ১৭৬৮ সালে প্রজাতিটি নিয়ে গবেষণা করেন সার্জন প্যাট্রিক রাসেল। তার নামে পরিচিতি পেয়েছে সাপটি। আগে বণ-জঙ্গলে দেখা গেলেও এখন ছড়িয়ে গেছে অন্তত ২৭ টি জেলায়। উপকূলীয় অঞ্চল বরিশাল, পটুয়াখালী, ও চাঁদপুরেও দেখা মিলছে এই সাপের। পূর্বে সাপটিকে বিলুপ্তপ্রায় ভাবলেও বর্তমানে এর প্রাদুরভাব অনেক বেড়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ।
(৫)২০১৩ সাল থেকে আবার এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এখন এর বিস্তার রীতিমত প্রভাব তৈরি করেছে। রাসেলস ভাইপার ডিম দেয় না, তবে বাচ্চা দেয়। তাই বংশ বিস্তারের সুবিধা বেশি। একটি স্ত্রী একবারে ৭০ টি পর্যন্ত বাচ্চা দেয়, যার বেশিরভাগই বেঁচে থাকে। পেঁচা, বেজি, ঈগলের মত শিকারি প্রাণী কমে যাওয়ায় আর ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এই সাপের বৃদ্ধির একপ্রকার কারণ।
(৬)সাপের প্রধান খাদ্য ইঁদুর। বরেন্দ্র অঞ্চলে আগে বছরে একটা ফসল হতো। বেশি ফসল হওয়ার কারণে ইঁদুরও বেশি থাকে। সাপের আনাগোনা বেশি থাকে। বর্ষায় কচুরিপানায় ভেসে সাপগুলো এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। পদ্মার স্রোতে ভেসে এভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত চলে এসেছে সাতটি। কারণ এর দাঁতের আকার বড়, বিষের পরিমাণ বেশি। আহত রোগীর চিকিৎসা জটিল।
(৭)এজন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সহকারী প্রয়োজন। রুগীর অবস্থা গুরুতর হলে দরকার পড়ে আইসিইউর। বেঁচে গেলেও রক্ষা নেই। সাপে কাটা অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি ক্রমাগত রক্তপাত, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারি হয়ে আসা, কিডনি ও ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। সাপের কামড়ের কিছুক্ষণ পরেই দংশিত স্থানে তীব্র ব্যথা হয়। জায়গাটির দ্রুত ফুলে ওঠে। এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কাছাকাছি আরো কয়েকটি অংশ ফুলে যায়।
(৮)একজন রোগীকে দশটি করে অ্যান্টিভেনাম ইনজেকশন দিতে হয়। এর দশটি ভায়াল মিলে হয় একটি ডোজ। বিষের মাত্রা বেশি হলে একাধিক ডোজও দরকার পরে। কিন্তু সাপের বিষের বিপক্ষে কার্যকর অ্যান্টিভেনাম সেভাবে বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। অথচ বছরে পাঁচ লাখের বেশি মানুষকে সাপে কামড়ায়। মৃত্যু ৬ হাজারের বেশি। ভারত থেকে যে অ্যান্টিভেনাম আনা হয়, সেটি মূলত চারটি সাপের বিষের মিশ্রণে তৈরি। ফলে কিছু সাপের ক্ষেত্রে এন টিভি নাম কাজ করলেও, অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে আংশিকভাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, স্থানীয় ৭ থেকে তৈরি এন্টিভেনাম সবচেয়ে বেশি কার্যকর।