দূরের এক গ্রামের একটি ছোট্ট কোণে সবুজ শ্যামল উঁচু ধান ক্ষেতের মাঝখানে ছোট্ট একটি চড়ুই পাখি ধীরে ধীরে তার ছোট্ট বাসা তৈরি করছিল। সে খুব মনোযোগ দিয়ে খর ও শুকনো ঘাস জোগাড় করছিল। তার ভবিষ্যতের ছানাদের জন্য একটি আরামদায়ক ও মজবুত বাসা বানানোর জন্য। যখন তার বাসা তৈরীর কাজ শেষ হলো তখন সেই চড়ুই পাখিটি খুব ধৈর্যের সাথে তার ডিমগুলিকে তা দিতে শুরু করল। সে নিজের ভালোবাসা দিয়ে তার ডিম গুলোকে আগলে রাখল। আর অপেক্ষা করতে লাগলো কখন তার ছোট্ট অতিথিরা ডিম থেকে বেরিয়ে আসবে।
অবশেষে এক সকালে সেই সুন্দর মুহূর্তটি এসে গেল। ডিমগুলো আস্তে আস্তে ফেটে যেতে লাগলো। আর সেগুলো থেকে বেরিয়ে এলো ছোট্ট মিষ্টি চড়ুই পাখির ছানা। মা চড়ুইটি তার ছানাদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও যত্ন নিয়ে তাদের দেখাশোনা করতে লাগলো। প্রতিদিন সে উড়ে উড়ে আশেপাশের ধানের ক্ষেতে খাবার খুঁজতে বের হয়ে যেত। তার পাখাগুলো যদিও ছোট ছিল, কিন্তু তাতে ছিল এক মায়ের শক্তি ও ভালোবাসা। কিন্তু একদিন যখন সে খাবার নিয়ে ফিরে এলো তখন সে তার ছানাদের মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখতে পেল। তারা ভয়ে কাঁপছিল এবং জানলো যে একজন কৃষক এসেছিল এবং সে বলেছিল যে ধান পেকে গেছে এবার কাটার পালা। তাই তার ছেলেরা আগামীকাল আসবে ধান কাটতে। ছানাগুলো ভয় পেয়ে গেল। কারণ তারা তখনো উড়তে শেখেনি।
কিন্তু মা পাখিটি চিন্তিত হওয়ার পরিবর্তে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতির সামলালো। সে তার ছানাদের আশ্বস্ত করল যে পরের দিন ধান কাটা হবে না এবং সত্যি সত্যি পরের দিন কেউ এলোনা ধান কাটার জন্য।ছানাগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর তাদের জীবন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। কিন্তু তাদের শান্তি বেশি দিন স্থায়ী হলো না। কয়েকদিন পর মা চরুইটি যখন খাবার নিয়ে ফিরে এলো তখন তার ছানারা আবার চিন্তিত মুখে তাকে জানালো যে সে কৃষক আবার এসেছিল এবং এবার সে বলেছিল যে সে দিনমজুর দের ডেকে আনবে, যারা ধান কেটে নিয়ে যাবে।
মা পাখিটি আবার তাদের বোঝালো যে কেউ আসবে না আর সত্যি সত্যি কেউ এলো না। তো, এভাবেই সময় কাটতে লাগলো আর ছানাগুলো এখন কিছুটা উড়তে শিখে গিয়েছিল। ওদের জীবনটা শান্তিতেই কাটছিল। কিন্তু একদিন যখন মা পাখি ফিরে এলো তখন সে তার ছানাদের মুখে অন্যরকম একটা ভাব দেখতে পেল। তারা জানালো যে কৃষক আবার এসেছিল আর সে বলেছিল যে, সে নিজেই পরের দিন সকালে ধান কাটতে আসবে। এবার মা পাখিটি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে বুঝতে পারল যে এবার সে আসবে। তাই দেরি না করে সে তার ছানাদের নির্দেশ দিল, আমাদের তাৎক্ষণাৎ বাসা ছেড়ে নতুন একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিতে হবে।
ছানাগুলো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল এবার ,কেন সে কৃষকের কথাই বিশ্বাস করেছ? তখন চুরিটি তাদের একটি মূল্যবান কথা বললো যে যখন কৃষক তার ছেলেদের বা দিন মজুরদের উপর নির্ভর করেছিল তখন কাজটা কখন শুরু হবে সেটা কেউ জানতো না। কিন্তু এবার সে নিজেই কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যখন আমরা নিজের দায়িত্ব নিজের হাতে নেই তখন ওই নিশ্চিত করতে পারি যে কাজটি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হবে। মা পাখিটি তার ছানাদের নিয়ে দ্রুত উড়ে গেল এবং একটি নিরাপদ স্থানে চলে গেল। কৃষক যে সময়টা নষ্ট করেছিলো তা তার ছানাদের উড়তে শেখার সুযোগ হয়ে গিয়েছিলো।আর যখন কৃষক পরের দিন সকালে এলো তখন সে একটি ফাঁকা পাখির বাসা দেখতে পেল।
এই গল্পের মাধ্যমে মা পাখি তার ছানাদের আত্মনির্ভরশীলতা ও দায়িত্ব পালন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিল। তাদের পরিবার নতুন পথে এগিয়ে চলল এবং একটি নিরাপদ জায়গায় একটি নতুন বাসা তৈরি করল। কৃষক অবশেষে তার ধান কেটে নিলো। মনে রাখবেন, সাহায্য নেওয়া ভালো কিন্তু অন্যদের উপর বেশি নির্ভরশীল হওয়া ভালো না।