পাটের মতো ভুট্টা থেকেও পরিবেশবান্ধব ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। ভুট্টার স্ট্যাচ থেকে এমন পচনশীল সব ব্যাগ তৈরি করে সারা ফেলে দিয়েছেন রাজশাহীর উদ্যোক্তা ইফতেখারুল হক। নিজের প্রতিষ্ঠানে তৈরি হাজার হাজার ব্যাগ এখন বিদেশেও রপ্তানি করছেন তিনি। রাজশাহীর অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বুট্টো থেকে তৈরি বিশেষ এই ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। এই ব্যাগগুলো পলিথিন ব্যাগ এর চেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ও টেকসই। আর ব্যাগগুলো কাঁচামাল, জৈব পদার্থ হওয়ায় দ্রুত মাটিতে মিশে যায়। ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার কোন আশঙ্কাও থাকে না। সব থেকে বড় কথা এই ব্যাগ দেখতে হুবহু পলিথিনের মতো। পলিথিনের মতোই এতে পানি বহন করা যায়। ব্যাগ তৈরির জন্য রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল এলাকায় তার নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম ক্রিস্টাল বায়োটেক।
ইফতেখারুল হক রাজশাহী নগরে কাজীহাটার বাসিন্দা। ব্যবসা প্রশাসনে পড়ালেখা শেষ করে তিনি সফটওয়্যার ডেভলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তারপর জুট ও জুতা তৈরি সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানিতেও কাজ করেছেন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে তিনি ভুট্টা দিয়ে ব্যাগ তৈরীর একটি কারখানা পরিদর্শন করতে ভারতের আহমেদাবাদে যান। সেখানে সবকিছু দেখে তার পছন্দ হয়। তারপর সেখানেই এই ব্যাগ তৈরির কাঁচামাল এবং কারখানায় বিভিন্ন যন্ত্র অর্ডার দিয়ে আসেন। ওই বছরের এপ্রিলে সবকিছু চলেও আসে। তারপর গোদাগাড়ির চাপাল এলাকায় স্থাপন করেন কারখানা।
২০২০ সালে নভেম্বরের মধ্যেই শুরু হয় উৎপাদন। এই ব্যাগ তৈরির জন্য মসুর ডালের মত সাদা সাদা একটি কাঁচামাল ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। এই বায়োপ্লাস্টিক টি ব্যাগ তৈরীর একমাত্র উপাদান। এটিতে থাকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, পিএনএ, পি বিএটি এবং ভুট্টার দানার ভেতরের সাদা অংশ। তাই ব্যাগটি ভুট্টার ব্যাগ হিসেবেই পরিচিত পেয়েছে। ব্যাগ তৈরীর ওই কাঁচামালটিতে ওয়ানস্টাচ-সহ আরও কিছু বাও মেটেরিয়াল থাকে। বর্তমানে ইফতেখারুলের কারখানায় ৮ জন কর্মী ব্যাগ তৈরি করে যাচ্ছেন। কারখানার যন্ত্রাংশে প্রতিদিন দুই লাখ পিস বা দুইজন ব্যাগ উৎপাদন সম্ভব। এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩০ হাজার পিস।
বায়োটেক ব্যাগের দাম হলো পলিথিন ব্যাগের চেয়ে কিছুটা বেশি। এক কেজি পণ্য রাখা যায় এমন ব্যাগ কারখানা থেকে বিক্রি করা হয় প্রতি পিস ২ টাকা। এছাড়া দের কেজির ব্যাগ তিন টাকা, তিন কেজির ব্যাগ ৫ টাকায় বিক্রি করা হয় কারখানা থেকে।শুরুর দিকে ইফতেখারুল হক শুধু রাজশাহীর বাজারেই এই ব্যাগ দিতেন। দিনে দিনে তার পরিবেশবান্ধব এই ব্যারে কথা ছড়িয়ে পড়ে।বাড়তে থাকে চাহিদা। এখন দেশের নানা প্রান্ত থেকেই কারখানায় অর্ডার আসছে। দেশের গণ্ডি পালিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছে যেমন দুবাই রপ্তানি হয়েছে এই ব্যাগ। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের নমুনা পাঠানো হয়েছে। রপ্তানির বিষয়ে চলছে আলোচনা। এভাবেই ভুট্টা এবং পাট থেকে তৈরি ব্যাগের উৎপাদন বাড়ছে।