উদ্যোক্তা আশিক খানের বেড়ে ওঠা যশোর শহরে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা শফিকুর রহমান ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী, মা ফাতেমা রহমান একজন নারী উদ্যোক্তা। ফাতেমা রহমান ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন। আশিকের পড়াশোনা শুরু হয় যশোরেই। তিনি ২০১০ সালে বাদশা ফয়সাল ইসলামী ইনস্টিটিউট থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ২০১২ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। দুটিতেই ফলাফল জিপিএ-৫। এরপর ২০১২ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে তার ইচ্ছা জাগে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং- এ পড়ার।
চলে আসেন ঢাকায়, ভর্তি হন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। ড্যাফোডিলে পড়ার সময় নিজের জমানো কিছু টাকা এবং মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকার ইস্টার্ন প্লাজায় ছোট একটি অফিসে এডভার্ব লিমিটেড নামে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করেন আশিক। তখন তার প্রতিষ্ঠানে মাত্র ছয় জন কর্মী ছিল। ওয়েব ডিজাইন, ই-কমার্স এর ওয়েবসাইট, গ্রাহক ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার সেবা দেওয়া হতো এই প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০১৭ সালে স্নাতক হওয়ার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি ভাষা ও ব্রিটিশ সংস্কৃতি কোর্সের জন্য বৃত্তি পান আশিক। ইংল্যান্ডে গিয়ে মূলত পোশাক ব্যবসার ধারণা পান। তবে দেশে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের কাজও ভালোই চলছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি আশিকের। কাল হয়ে দাঁড়ায় করো না। টাকা পয়সা আটকে যায়, বিকল্প ভাবতে শুরু করেন আশিক।
২০২০ সালে তার ভাবনায় আসে সরাসরি তৈরি পোশাক বিক্রি করার কথা। প্রস্তুতি হিসেবে সে বছরের মার্চে বাসায় বসে ফেসবুকে লাইভে এসে অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পোশাক এলে বিক্রি করা শুরু করেন। অর্থাৎই একদিন ব্লেজার সরবরাহের একটা বড়সড়ো অর্ডার পান। সেজন্য ব্যাংক থেকে পাওয়া ঋণের ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন সেখানে। কিন্তু ব্লেজার নেওয়ার পর সেই প্রতিষ্ঠান উধাও হয়ে যায়। এতে হতাশ হয়ে পরেন আশিক। বিক্রি করে দেন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান সার্ভার। এদিকে অফিসের ভাড়া বকেয়া পড়ে যাওয়া মালিক পুরো অফিস নিয়ে নেয়।
আশিক অনুরোধ করে দুইটি কক্ষ রাখেন। সেখানে তিনি লাইফ শপিং- এর দোকান চালু করেন। করোনা শেষে ছোট এই দোকানে আসতে থাকেন। ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ে। এভাবে লাইক শপিং নামে অনলাইনে এবং অফলাইনে দোকানে পোশাক বিক্রি করতে থাকেন আশিক। এরপর ২০২১ সালে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সএ আরেকটি দোকান খোলেন। পরবর্তীতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আরো কয়েকটি আউটলেট খোলেন। ঢাকার বাইরেও শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এদিকে ফেসবুকে লাইভ শপিং আর আশিকের নিজস্ব পেজ আছে। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ২ লাখের বেশি নির্ধারিত ক্রেতা রয়েছেন। অ্যাডভাট নামে সেই সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানটি এখনো আছে আশিকের।