সাম্যবাদী কবিতার পাঠ-পরিচিতি

সাম্যবাদী কবিতা- আবদুল কাদির সম্পাদিত বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল রচনাবলি‘র প্রথম খন্ড থেকে ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি সংকলন করা হয়েছে। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সাম্যবাদী কাব্যের অন্তর্ভুক্ত এ কবিতাটিতে বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক মানব সমাজ গঠনের প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে। কবি এই ‘মাম্যের গান’ গেয়েই গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে আগ্রহী। কবির বিশ্বাস মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার চেয়ে সন্মানের আর কিছু হতে পারে না। নজরুলের এই আদর্শ আজও প্রতিটি সত্যিকার মানুষের জীবনপথের প্রেরণা। কিন্তু মানুষ এখনও সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে রাজনীতি করছে, মানুষকে শোষণ কর, একের বিরুদ্ধে অন্যকে উস্কে দিচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠীর দোহাই দিয়ে মানুষকে পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

নজরুল এই কবিতায় সুস্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন: মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর। তাই তিনি জোর দেন অন্তর-ধর্মের উপর। ধর্মগ্রন্থ জুড়ে যে জ্ঞান মানুষ আহরণ করতে পারে, তাকে যথোপযুক্তভাব উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন প্রগাঢ় মানবিকতাবোধ। মানুষের হুদয়ের চেয়ে যে শ্রেষ্ঠ কোনো তীর্থ নেই, এই প্রতীতি কবির স্পোপার্জিত অনুভব । এ কারণেই কবি মানবিক মেলবন্ধনে এক অপূর্ব সংগীত পরিবেশন করতে আগ্রহী। এ গানে মানুষে মানুষে সব ব্যবধান ঘুচে যাবে। মানবতার সুবাস ছড়ানো আত্মার উদ্ধোধনের মধ্য দিয়ে এই জীবনকে পবিত্রতম করে তোলা সম্ভব, এই মর্ম বাণীকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই এই কবিতায় নজরুলের অন্বিষ্ট।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পরিচয়।

Leave a Comment