উল্লাস পালের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ঘটনা !

উল্লাস পালের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ঘটনা !,,,,উল্লাস পালের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ঘটনা !,,,,,

ডান হাত দিয়ে লেখা যায় না, পা হাতেও সমস্যা! দুই পায়েও আছে সমস্যা !  এতসবসমস্যা নিয়েও ৪৪ তম বিসিএসে এডমিন ক্যাডার হয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল। জীবনে তিনি যা যা করেছেন সবকিছুতেই আছে পরিশ্রম, পরিশ্রম আর পরিশ্রমের ছোয়া। তিনি কখনো কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার কথা চিন্তাও করেননি। মানসিকভাবে নিজেকে অন্য আর ১০ জনের মত সুস্থ মনে করে উল্লাস পাল।

উল্লাসপালের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার ভেদবগঞ্জ উপজেলার রাম ভদ্রপুর ইউনিয়নে কার্তিকপুর গ্রামে। বাবা উত্তম কুমার পাল একজন মৃঃশিল্পী, আর মা আন্না রানী পাল গৃহিনী। জন্মের পর শিশুরা যে বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে হাঁটা শেখে, উল্লাস পাল সেভাবে হাঁটতে পারতেন না। কারণ জন্মগতভাবেই তার দুই হাত ও দুই পা বাঁকা ছিল। তবে মা-বাবা তার চিকিৎসার কোন কমতি রাখেননি। চিকিৎসার জন্য ভারতেও নেওয়া হয়েছিল তাকে। একটি পায়ের অপারেশনের মাধ্যমে কিছুটা হাঁটা চলার উপযোগী হলেও তার ছিল কষ্টসাধ্য। চিকিৎসকদের শত চেষ্টার পরও তার হাত পা স্বাভাবিক হয়নি।

তার বাড়ির পাশেই কার্তিকপুর পালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষাজীবন শুরু হয় তার। বর্ষায় কাদামাটি লাগিয়ে স্কুলে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য, বাবােই তাকে কোলে তুলে নিয়ে যেতেন প্রতিদিন স্কুলে। লেখার জন্য ব্যবহার করতেন বা হাত। এভাবেই সাফল্যের সিঁড়িবে তিনি শুধু উপরেই উঠেছেন। ২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ ে-৫ পেয়ে তিনি এসএসসি পাস করেন। ঢাকায় এসে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ঢাকা নর্র্দান কলেজে। সেখান থেকে ও ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তির্ণ হন। এরেপর ভর্র্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে। ঢাবির খ ইউনিটি ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৪৬৩ তম হয়েছিলেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার অপশন ছিল। কিন্তু তিনি সচেতনভাবেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন। বুক ভরা আত্মবিশ্বাস ছিল, সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন।

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য দিনরাত এক করে পড়াশোনা করা উল্লাস পাল ৪০ তম, ৪১ তম, ও ৪৩ তম বিসিএসে অংশ নেন। ৪০ তম বিসিএস এ পাস করেও কোন ফল পাননি, ৪০ তম বিসিএস এ জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হন। অবশেষে ৪৩ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তবুও তৃপ্তি আসেনি। তার স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। উল্লাস পালের জীবনের যত অর্জন এসেছে, তা সহজ পথে আসেনি, ছোটবেলা থেকেই বন্ধু আর পরিবার ছাড়া গোটা দুনিয়াটাই যেন তার বিপক্ষে ছিল। কোলে যাওয়ার পথে অনেক অবুঝ বাচ্চারা তার গঠন দেখে হাসতো।

তখন ছোটবেলা থেকেই একটা লজ্জা বোধ কাজ করতো। ফুলের সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে চেষ্টা করতেন, কিন্তু হাডুডু ও  ক্রিকেটের মত কঠিন খেলা গুলোও তার দ্বারা সম্ভব হতো না। পড়াশোনায় অন্যদের চেয়ে এগিয়েছিলেন, তাই শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি আলাদা ভালোবাসা পেয়েছেন। আগের বিসিএসে প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা পাস করে ভাই ভাই গিয়েছিলেন উল্লাসপাল। কিন্তু ভাইবা বোর্ডে তার হৃদয়, ভেঙে যায়। তার প্রথম পছন্দ ছিলো  এডমিন তথা প্রশাসন ক্যাডার । ভাইভা বোর্র্ডে একজন পরীক্ষক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, আপনার যেহেতু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তাই এসব কাজ করতে পারবেন না। এমন প্রশ্নের উল্লাস পালের মনে হয়েছিল, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে তিনি মনে হয় তার পছন্দের ক্যাডার প্রশাসন পাননি।

উল্লাস পাল বলেন যখন নিজের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রশাসন ক্যাডারে মিলিয়ে নিশ্চিত হলাম তখন চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। অনেকে আমাকে উহহাস করেছে,  বলেছে পারবে না। আমি দমে যাইনি। আমার স্বপ্ন ছিলো প্রশাসন ক্যাডার, আর সেটা সত্যি হলো। অসম্ভবকে সম্ভব করা উল্লাস পাল বলেন,  সরকার আমাকে যেখানেই দায়িত্ব দিক, আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো, সবসময় মানুষের পাশে থাকতে চাই, কাজ করতে চাই জনকল্যাণে।  একজন উল্লাস পাল লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা। স্বপ্ন পূরণের পথে যারা বার বার হোচট খায় – উল্লাস পাল তাদের জন্য অনুপ্রেরণা।….

আরও পড়ুন সুশান্ত পালের  জীবনের গল্প

Leave a Comment