গর্ভাবস্থায় টেনশন থেকে মুক্তি থাকার উপায়

গর্ভাবস্থায় টেনশন থেকে মুক্তি থাকার উপায়…গর্ভাবস্থায় টেনশন থেকে মুক্তি থাকার উপায়… বিস্তারিত পড়ুন….

গর্ভাবস্থা একজন নারীর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। তবে এই সময়ে শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তনের কারণে অনেকেই উদ্বেগ, টেনশন বা মাসিক চাপ (menstrual-like stress) অনুভব করেন। যদিও গর্ভাবস্থায় মাসিক হয় না, তবুও মাসিকের সময় যেসব উপসর্গ যেমন পেটব্যথা, মেজাজ খারাপ, দুর্বলতা বা পিঠে ব্যথা দেখা দেয়, তা অনেকে গর্ভকালেও অনুভব করেন। এসব চাপ থেকে মুক্তির জন্য কিছু কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হলো:

১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম:

গর্ভবতী অবস্থায় শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

২. হালকা ব্যায়াম:

প্রসবজনিত ব্যথা ও গর্ভকালীন অস্বস্তি দূর করতে গর্ভবতীদের উপযোগী হালকা ব্যায়াম (যেমন: হাঁটা, গর্ভকালীন যোগব্যায়াম) সহায়ক হতে পারে। এটি মানসিক প্রশান্তিও দেয়।

৩. সঠিক খাদ্যাভ্যাস:

পুষ্টিকর খাবার যেমন ফল, সবজি, পানি এবং আয়রন বা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ শরীর ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। ক্যাফেইন ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।

৪. মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা:

ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং প্রিয় কাজ করা মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর। প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো ও খোলামেলা আলোচনা করাও সাহায্য করে।

৫. চিকিৎসকের পরামর্শ:

অতিরিক্ত চাপ বা অস্বাভাবিক কোনো উপসর্গ (যেমন তীব্র পেটব্যথা, রক্তপাত) থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন পায়খানার সাথে রক্তপরারকারণ কি?

গর্ভাবস্থায় মন ভালো ৬ টি উপায়:

গর্ভাবস্থায় নারীর শরীরে ও মনে নানা রকম পরিবর্তন আসে, যা অনেক সময় উদ্বেগ, দুঃখ বা বিষণ্ণতার সৃষ্টি করতে পারে। মন ভালো রাখতে কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করা যায়:

  1. পর্যাপ্ত ঘুম বিশ্রাম: শরীর ক্লান্ত হলে মনও দুর্বল হয়, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি।
  2. হালকা ব্যায়াম: নিয়মিত হাঁটা বা গর্ভকালীন উপযোগী যোগব্যায়াম মানসিক প্রশান্তি আনে।
  3. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: স্বাস্থ্যকর খাবার শরীর ও মন দুইই ভালো রাখে।
  4. প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো: স্বামী, পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা মানসিক চাপ কমায়।
  5. সৃজনশীল কাজ: গান শোনা, বই পড়া, আঁকা বা হস্তশিল্প মন ভালো রাখে।
  6. ধ্যান শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন: মানসিক শান্তি আনার জন্য উপকারী।

গর্ভাবস্থায় মানসিক সুস্থতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি তা মা ও শিশুর সুস্থতার জন্যও জরুরি।

গর্ভাবস্থায় চিৎকার করলে কি ক্ষতি হতে পারে:

গর্ভাবস্থায় চিৎকার বা জোরে শব্দ করা অনেক সময় স্বাভাবিক হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা জরুরি। চিৎকার করলে শরীরে অনেক রকম প্রভাব পড়তে পারে।

প্রথমত, জোরে চিৎকার করলে গর্ভবতীর শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয় এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে, যা উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কারণ এটি মায়ের শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়ায়।

দ্বিতীয়ত, বারবার চিৎকার বা উত্তেজিত হওয়া গর্ভবতীর রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

তবে মাঝে মাঝে স্বাভাবিক আবেগপ্রকাশ যেমন খুশি হয়ে চিৎকার করা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য চিৎকার বা চাপ অনুভব করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

গর্ভাবস্থায় মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য শান্ত ও ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি।

গর্ভাবস্থায় বেশি ঘুমালে কি হয়:

গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অতিরিক্ত শুয়ে থাকা কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। বেশি সময় শুয়ে থাকলে রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে পিঠ বা পেটে চাপ পড়ার কারণে। এর ফলে পায়ে ফোলা, স্নায়ুর অস্বস্তি বা পিঠ ব্যথা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত শুয়ে থাকার ফলে শারীরিক সক্রিয়তা কমে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার কারণে মেদ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

শরীর সক্রিয় রাখতে দিনে হালকা হাঁটা বা গর্ভকালীন ব্যায়াম করা ভালো। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিশ্রাম ও চলাচলের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা উচিত।

উপসংহার:
গর্ভাবস্থায় সঠিক বিশ্রাম জরুরি, কিন্তু বেশি শুয়ে থাকলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে, তাই সচেতন থাকা প্রয়োজন।

Leave a Comment