বুয়েটের প্রতিষ্ঠাতা হলো নবাব সলিমুল্লাহ। ১৯ শতকের শেষ ভাগে জরিপ কারদের জন্য একটি জরিপ শিক্ষালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান বুয়েট। ১৮৭৬ সালে এটি ঢাকা সার্ভিস স্কুল নামে প্রতিষ্ঠাতা লাভ করে। এর সার্ভে স্কুলকেই পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের রূপান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তৎকালীন জমিদার নবাব আহসানুল্লাহ১ লাখ ১২হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। নবাব আহসানুল্লাহ ছিলেন নবাব সলিমুল্লাহর পিতা। শিক্ষানুরাগী এই ব্যক্তি ১৯০১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন।
এরপর তার পুত্র খাজা সলিমুল্লাহ নবাব পদে অধিষ্ঠিত হয়ে সেই অর্থ পরিষদ করেন। ১৯০২ সালে ঢাকা সার্ভে স্কুল তথা বর্তমান বুয়েটের নামকরণ হয়, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। তখন এটিই ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রথম কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেই সময় সলিমুল্লাহ ঘোষণা দেন, তার দাদা খাজা আব্দুল গনির প্রতিষ্ঠিত আব্দুল গনি হাই স্কুল এবং ঢাকা মাদ্রাসা থেকে পাস করে যারা ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হতে পারবে, তাদের মধ্য থেকে অন্তত চারজনকে বৃত্তি দেওয়া হবে।
এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবে প্রতিফলিত হলে কৃতজ্ঞতা ও স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯০৮ সালে নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল। তখন এটি সিভিল, মেকানিক্যাল, ও ইলেকট্রিক্যাল কোর্স তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া শুরু করে। ১৯০৬ সালে বর্তমান শহিদুল্লাহ হলের পাশে এই স্কুলের ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর ১৯১২ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে এটি সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিকভাবে স্কুলটি ঢাকা কলেজের অধিভুক্ত ছিল এবং পরে এটিকে জনশিক্ষা পরিচালকের অধীনে আনা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ অঞ্চলে শিল্প উন্নয়নের জন্য বড় আকারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।
কিন্তু তখন বাংলায় দক্ষ জনশক্তির তীব্র ঘাটতে ছিল। এমতাবস্থায় সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি ঢাকায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে। যেখানে ১২০ জন শিক্ষার্থী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক, রাসায়নিক এবং কৃষি প্রকৌশলে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি নিতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত থেকেই ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল- কে আহসানুল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে উন্নতি করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ডঃ এম এ রশিদ কে এই কলেজের প্রথম বাঙালি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৫৬ সালে কলেজটিতে একটি নতুন কোর্স কারিকুলাম এবং সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করা হয়।
১৯৫৭ সালে স্নাতক ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ থেকে বাড়ি 240 করা হয় এবং 1958 সাল থেকে ডিপ্লোমা কোর্স বাদ করা হয়। এরপর ১৯৬২ সালের ১ জুন এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা হয় নাম দেওয়া হয় ‘East Pakistan University of Engeneering and Technology বা EPUET। আর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, EPUET পরিবর্তন করে এর নাম রাখা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা বুয়েট। এভাবেই স্যার সলিমুল্লাহর দান করা অর্থ থেকে একটি সাধারণ স্কুল হয়ে ওঠে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।