একটা সময় ক্যাসিওর এই ঘড়ি ছিল মানুষের হাতে হাতে। শিক্ষক থেকে ছাত্র. অফিসের পিয়ন থেকে বড় কর্মকর্তারাও এই ঘড়ি ব্যবহার করত। ঘড়ি মানে বাংলাদেশের মানুষ এই ঘড়িটি ব্যবহার করত। অতীতে এই ঘড়িটির জনপ্রিয়তা ছিল অধিক বিস্তৃত। কারো জন্মদিন কিংবা কোন অনুষ্ঠানে গেলে উপহার হিসেবে দেওয়া হতো ক্যাসিওর এই মডেলের ঘড়ি।
ক্যাসিও ঘড়ির প্রতিষ্ঠাতা জাপানের বিখ্যাত কোম্পানি ক্যাসিও কম্পিউটার লিমিটেড। কিভাবে বাংলাদেশে এসেছিল জাপানের এই ঘড়ি? কিভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল? চলুন জেনে নেওয়া যাক…..
বাংলাদেশ ক্যাসিও পা রেখেছিল ক্যালকুলেটর দিয়ে। পর্যায়ক্রমে প্রবেশ করে ক্যাসিওর ঘড়ি। শুধু বাংলাদেশী না, সারা বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক বিকৃত ইলেকট্রনিক দ্রব্যের একটি হলো ক্যাসিও ঘড়ির এই মডেলটি। এই ঘড়িটির চাহিদা এতই ছিল যে. ক্যাসিও কোম্পানি কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘড়ির বিক্রির পরিমাণ জানায়নি।
আরও পড়ুন বিশ্বের প্রথম তৈরি হওয়া ট্রেন !
অনেকে ধারনা করেন. সঠিক হিসাব তাদের কাছে ছিল না। 1946 সালে যাত্রা শুরু করা ক্যাসিও কোম্পানি আর্থিকভাবে নিজেদের জায়েন্ট হিসেবে প্রমাণ করে ৮০ দশকে। ক্যালকুলেটর আর হাত ঘড়ির জগতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় জাপানিয প্রতিষ্ঠানটি।
তারা তাদের জনপ্রিয় মডেল ক্যাসিও এফ-৯১ ডব্লিউ ঘড়িটি প্রথম প্রকাশ করে ১৯৮৯ সালে। রায়োসুকে মোরিয়াই নামে এক ডিজাইনার এই ঘড়ির ডিজাইন করেছিল। এই ঘড়িটি তৈরি করার সময় একই সাথে স্থায়িত্ব, দীর্ঘ ব্যাটারি, আর স্বল্পমাত্রায় পানি প্রতিরোধে ক্ষমতার সমন্বয় ঘটানোর বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা হয়।
এর ডিজাইন এমন ভাবে করা হয় দেখতে খুবই সাদামাটা। এই ডিজাইনটি পরবর্তীতে সারা দুনিয়াতে ব্যাপক পরিচিতি পায়। ক্যাসিও কোম্পানির সার্বিক ব্র্যান্ড মূল্য আর আস্থার জায়গা কে নতুন মাত্রা দেয় এই ঘড়িটি। এই ঘড়িটি জনপ্রিয় হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল- এটি চালানো বেশ সোজা এবং সহজ। ঘড়ির দুপাশে থাকা তিনটি বোতামের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় যাবতীয় কাজ।
একটি বোতাম দিয়ে আলো জ্বালানো যায়। সেই আলোতে সন্ধ্যা কিংবা রাতে ঘড়িতে সময় দেখতে পাওয়া যায়। একই সঙ্গে খুব সহজে দিন, মাস, ঘন্টা তারিখ পরিবর্তন করা যায়। এছাড়াও স্টপ-ওয়াচ ও এলার্র্ম সিস্টেম ঘড়িটিকে জনপ্রিয় করে তোলে।
এছাড়াও এই ঘড়িটি পানি প্রতিরোধী। শুরুতে স্বল্প পানিরোধী থাকলেও এরপর সময়ের সঙ্গে এটিতে বাস এটিএম ওয়াটার রেসিস্ট্যান্ট দেওয়া হয়। যার ফলে ৫০ মিটার পর্যন্ত পানির গভীরতায়ও এটি সহজে ব্যবহার করা যায়। সাঁতার, গোসল কিংবা দীর্ঘ সময় বৃষ্টিতে ভিজলেও কিছু হবে না।
এর দাম ছিল মানুষের সাধ্যের মধ্যে। মান ভেদে 50 থেকে 500 টাকার ভিতর। ঘড়িটি এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে এটি ছিল বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ৭, ১০ এমনকি ১২, ১৫ বছর পর্যন্ত টিকে যাওয়ার ইতিহাস আছে এই ঘড়ির। হাত থেকে পড়ে গেলে, ঘষা লাগলে বা ভারি কিছুতে চাপা পড়লেও এতে ড্যামেজ হতো না।
এই ঘড়ির মুূল বডিটি নির্মিত প্লাস্টিক দিয়ে, পেছনে চারটি স্ক্রু দিয়ে ইস্পাতের প্লেটের ভেতর আছে ব্যাটারি িএবং ঘড়ির মূল যন্ত্রাংশ। সময়ের সঙ্গে ক্যাসিও এফ-৯১ ডব্লিউ কালো প্লাস্টিক কেসের আইকনিক মডেলটি ছাড়াও আরো কিছু পরিবর্তন এনে বিভিন্ন সময় বাজারে ছেড়েছিল।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল
অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেমও ছিল বেশ জনপ্রিয়। তবে ধীরে ধীরে নকল ঘড়ি আসতে থাকে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ক্যাসিওর মত করে ঘড়ি তৈরি করে বাজারে ছাড়তে থাকে এতে ক্রেতাদের মনে অনাস্থা তৈরি হচ্ছিল। তাই ঘড়িটির নকল থেকে ঠেকাতে একটি মোক্ষম পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিল ক্যাসিও কোম্পানি।
ডান দিকের বোতাম টি ৩ সেকেন্ড চেপে রাখলে ক্যাসিও লেখাটি ইংরেজিতে ভেসে ওঠলে তবে বোঝা যেত ঘড়িটি অরিজিনাল। সময়ের সাথে ঘড়ির চাহিদা কমে এসেছে অনেকখানি। মোবাইল কিংবা স্মার্টওয়াচের কাছে হার মেনেছে হাত ঘড়ি। একসময়ের জনপ্রিয় ক্যাসিও এফ-৯১ ডব্লিউ এখন বলতে গেলে হারিয়েই গেছে।