অলসতা দূর করার কৌশল Tricks to overcome laziness

Tricks to overcome laziness অলসতা দূর করার কৌশল।

একটি ছোট্ট গ্রাম ছিল শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে। সেখানে এক যুবক তার বাবা-মার সাথে একটি ছোট্ট ঝুপড়িতে বাস করতেন। যুবকের নাম ছিল বেলাল। যে কিনা তার অলস স্বভাবের জন্য পুরো গ্রামে পরিচিত। তার প্রতিদিনের কাজ ছিল তার বাবার সাথে ক্ষেতের কাজ করা এবং ধান খেতে পাখিদের তাড়ানো। গ্রামের অন্যান্য মানুষেরা যখন ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে পাখিদের তাড়ানোর জন্য লাঠিবা গুলতি ব্যবহার করত তখন  বেলাল ভাবতো এরা সবাই দাঁড়িয়ে কেন কাজ করছে?

বেলাল আলাদা কিছু করার চিন্তা করল। মাঠের চারদিকে কাঠের খুঁটিতে খালি তেলের চীনের ভিতরে কিছু নুড়ি পাথর দিয়ে ঝুলিয়ে দিল এবং সেগুলোকে রশি দিয়ে বেধে দিল। যাতে সে আরামে শুয়ে পাখিদের ভয় দেখাতে পারে। ছেলের এমন অলসতাতে তার বাবা কিছুটা চিন্তিত হতো। তিনি মনে করতেন যদি একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে বেলাল একা সব কাজ সামলাতে পারবে না। তবে বেলাল তার বুদ্ধির উপায়ে তাকে দেওয়া কাজ শেষ করে ফেলতো বলে তার বাবা কখনোই খুব বেশি ক্ষুব্ধ হতে না।

কিন্তু সময় কারো পক্ষে বেশিক্ষণ থাকে না। গরমের দিন এসে পড়েছিল আর ধানের ক্ষেতে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন ছিল। তখনই হঠাৎ তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন পুরো ভার বেলালের কাধে এসে পরল। সপ্তাহ পেরিয়ে গেল কিন্তু তার বাবা সুস্থ হলেন না। ধীরে ধীরে যা ভয় ছিল তাই বাস্তবে পরিণত হলো। খরার কারণে শুকিয়ে যেতে লাগলো। পানি না থাকায় ধানের ফসল নষ্ট হয়ে গেল। বেলাল এখন পুরোপুরি হতাশ হয়ে গিয়েছিল। সে বুঝতে পারছিল না কি করবে। পরিবারের সঞ্চয় শেষ হয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে বাবার চিকিৎসার খরচ বাড়ছিল।

যে ফসল তাদের আসার আলো ছিল তা এখন বিলীন হয়ে গেছে। রাতের আকাশের তারা দেখতে দেখতে বেলাল গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। ভাবতে লাগলো আমি তো গ্রামের ছেলে খেতের কাজ আমার জন্য কঠিন হওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমার অলসতা এবং পরিশ্রমের অভাবের কারণে পরিবারের একমাত্র আশা ভেঙ্গে গেছে। সে নিজেকে খুব দুর্বল মনে করছিল। পরের দিন সকালে গ্রামে কিছু কোলাহল দেখা গেল। জানা গেল রাজা তার সৈন্যদের মাধ্যমে গ্রামে একটি প্রতিযোগিতার ঘোষণা দিয়েছেন।

রাজকুমারের জন্মদিন উপলক্ষে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হইবে। যেটাকে শোনার একটি বক্স দেওয়া হবে। যখন বেলাল শুনলো বিজেতাকে সোনা দেওয়া হবে। তখন সে বিনা দ্বিধায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিল। গ্রামের লোকেরা হেসে উঠলো। বেলাল এই অলস ছেলে আর কিবা করতে পারবে? বেলালের বাবা আমার বিশ্বাস ছিল না যে সে জিততে পারবে। কিন্তু তারা  তাকে অনুমতি দিলেন। তাদের আশা ছিল হয়তো এই প্রতিযোগিতার অন্যের জীবনকে পরিবর্তিত করবে এবং তাকে দায়িত্বশীল বানাবে। তিন দিন পর প্রতিযোগিতা শুরু হলো। সব প্রতিযোগী গ্রামের কাছে একটি হ্রদের তীরে জমা হল। বেলাল দেখলেও অন্যান্য প্রতিযোগীরা তার থেকে অনেক শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত।

 সে চিন্তায় পড়ে গেল আমি এদের সাথে কিভাবে প্রতিযোগিতা করব কিন্তু সে হতাশ হয়নি। কিন্তু সে তার পরিবারের দুর্দশা মনে করে দৃঢ় সংকল্প করল যা কিছুই হোক তাকে এই প্রতিযোগিতা জিততেই হবে। প্রথম রাউন্ডে সকলকে হ্রদ বার করতে বলা হলো। নিয়ম ছিল তারা যে কোন উপায়ে হ্রদ পার করতে পারবে। প্রথম তিনজন প্রতিযোগী পরবর্তী রাউন্ডে উঠবে। গিনতি শুরু হতেই সবাই হ্রদে ঝাপ দিল। কিন্তু বেলাল একটি আলাদা পরিকল্পনা কল্পনা করলো। সে হ্রদের পাশে হারিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সেই পার্শবর্তী বলে এগিয়ে একটি ছোট কাঠের টুকরা নিয়ে এলো। সে কাঠ থেকে একটি ছোট নৌকার মতো তৈরি করল। একটি বড় লাঠিকে কাঠের প্যাডেল হিসেবে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে হ্রদ পার হতে শুরু করল।

বিড়াল ভাবলো প্রতিযোগিতা হ্রদ পার করার জন্য, সাঁতার কাটার জন্য নয়। সে ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রতিযোগিতার পিছনে ফেলতে লাগলো কারণ তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত বেলাল তৃতীয় স্থানে পৌঁছল এবং পরবর্তী রাউন্ডে নির্বাচিত হলো। পরের দিন চূড়ান্ত রাউন্ড শুরু হলো। এখন তিনজন প্রতিযোগীকে একটি বড় মাঠের মধ্য দিয়ে একটি কাঠের ব্লগকে এক কিলোমিটার ধাক্কা দিতে হবে। তাদের কিছু যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা শুধুমাত্র একটি যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। গিনতি শুরু হতেই অন্যান্য প্রতিযোগিরা এবং লিভার মত যন্ত্র নিয়ে নিল। কিন্তু অনেক চুপচাপ চিন্তা করতে লাগলো। তারপর সে এমন কিছু বেছে নিল যা দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। একটা ছুরি। সবাই ভাবছিল ছুরি দিয়ে কাঠের ব্লগ কিভাবে খেলা যাবে। কিন্তু রনি তার বুদ্ধিমত্তা দেখালো। সে ছুরি দিয়ে কাঠের ব্লগ টিকে কোপাতে শুরু করে এবং সেটাকে গোল আকারে পরিণত করে।

এখন এই গোল ব্লক ঠেলে নিয়ে যাওয়া তার জন্য সহজ হয়ে গেল। সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠেলা দিল এবং শেষে প্রথম হয়ে ফিনিশ লাইনে পৌঁছালো। গ্রামের সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল তারা বেলালের আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রমকে সম্মান জানালো। একজন অলস যে বুদ্ধিমত্তা এবং পরিশ্রমে এগিয়ে গিয়ে প্রতিযোগিতা জিতেছে। প্রায় অলস মানুষরা বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু তাদের সমস্যা হল যে তারা অলসতার কারণে তাদের প্রকৃত শক্তি দিয়ে কাজ করতে পারে না। এই গল্পে আমরা দেখেছি যখন কোন অলস ব্যক্তির সামনে একটা লক্ষ্য আসে সে তার ভেতরের শক্তি ও বুদ্ধি প্রকাশ করে।

প্রতিদিন সকালে যে অভ্যাসগুলো মেনে চলবেন?

 প্রতিদিন আপনি যে ভুলগুলো করে থাকেন

Leave a Comment