আয়না ঘরের জীবন কতটা ভয়ংকর?

আয়না ঘরে গুম হয়ে থাকা বিগ্রেডিয়ার আজমির ফিরে এসেছেন, দীর্ঘ দশ বছর পর। এসে দেখেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী, নয় বছর তার জন্য অপেক্ষা করে, গত বছর অন্যকে বিয়ে করেছেন। কারণ তার স্ত্রী জানতেন না তিনি কোথায় আছেন, তার কোন খোঁজ খবর জানতেন না। এরপরও তিনি টানা দশটা বছর অপেক্ষা করার পর অন্যকে বিয়ে করে নেন। বিগ্রেডিয়ার আজমির টর্চারসেল থেকে ফিরে দেখেন তার পরিবার বলতে আর কিছুই নেই।

তার জীবনসঙ্গিনী নেই, আলো আশা-আকাঙ্ক্ষা, কোন কিছুই তার আর নেই। জীবন থেকে অনেকগুলো বছর হারিয়ে গেল অন্ধকার আয়না ঘরে। আয়না ঘরে এমন হাজারো স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, অনেকে হারিয়েছে তার পরিবার-পরিজনকে, মা তার সন্তানকে হারিয়েছে, সন্তান হারিয়েছে পিতাকে। আর্তনাদ হাহাকারে দিনরাত পার করার পর আজকের এই বাংলাদেশ যেখানে কথা বলার আগে আপনাকে আর ভয় পেতে হচ্ছে না।

বিগ্রেড ইয়ার আজমিরের দিকে তাকান, কেমন হয়ে গিয়েছে তার চেহারা। তিনি ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। সত্যের পথে তিনি কথা বলেছেন বলে খুনি হাসিনা তাকে আয়না ঘরে বন্দী করে রাখেন। দীর্ঘ আট বছর সূর্যের আলো না পাওয়ায় তার শরীরে হরমোনালিন ব্যালেন্স হয়েছে। দাড়ি এবং চুল পেকে গিয়েছে। একটা মানুষ সূর্যের আলোবিহীন ৩০ দিন থাকলে, শরীরের মারাত্মক ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ খাদ্য খাবার খেয়েই আমাদের শরীর চলে না।

অবশ্যই প্রাণীকে সূর্যের সংস্পর্শে আসতে হয়। ভাবুন তাহলে দীর্ঘ আট বছর সূর্য বিহীন, আলো বিহীন বসবাস করে তিনি কিভাবে বেঁচে ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বাঁচিয়ে রেখেছেন, যাতে আমি আপনারা তাকে দেখে অনেক কিছু ধারণ করতে পারি। স্ত্রীকে হারিয়ে বড় ভাইকে দেখে হাসপাতালের বিছানায় ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিলেন আজমির। সে কি কান্না। একটু স্বাভাবিক হয়ে সবাইকে বোঝাচ্ছিলেন দীর্ঘ ৮ থেকে ৯ বছর কাটানো ভয়ংকর আয়না ঘরের কথা।

ওযু করার জন্য পানি দিতেন না বলে, একটা তায়াম্মুম তিনি ব্যবহার করতেন। দেখিয়েছিলেন আট বছর পুরনো সেই গামছা, নিয়েছিলেন গরমে যাতে গায়ের উপর দিয়ে নামাজ পড়তে পারেন, সেখানে সব সময় ফ্যান চালানো হতো না, ঘামে তিনি ভিজে যেতেন। অবলীলায় কান্নায় কান্নায় বলতে লাগলেন এই গামছায় যে কত চোখের পানি মুছেছি। যদি এগুলো সংরক্ষণ করা হতো একটা  দিঘী ভরে যেত। দীর্ঘ আট বছর পরে এসব কথা বলছিলেন, তার মনে হচ্ছিল তার কথা কি কেউ বুঝতে পারছে, তাই দ্বিতীয় বার করে আবার বলছেন।

মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, যে তিনি এখনো মানুষদেরকে চিনতে পারছেন। কথা বলতে পারছেন। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কত বড় নক্ষত্র ছিলেন তিনি। তার সুস্থভাবে বেঁচে ফেরা, এবং তিনি তার সময় কাটানোর জন্য এবং আল্লাহর এবাদত বন্দেগী করার জন্য সাথে নিয়েছিলেন  একটা কোরআন শরীফ। যার কিছু পাতা ছিড়ে গেছে এবং তিনি সেগুলো জুড়ে রেখেছেন। প্রিয়জনদের চিনতে পারা, মানুষের সাথে কথা বলা, এবং তার ব্যবহার দেখে বোঝা যায় তিনি মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী এবং সুস্থ ব্যক্তি ছিলেন।

বিগ্রেডিয়ার আজমিরকে ভালোবেসে থাকলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন এবং আপনার মতামত কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন।

যমুনা টিভি কেন জনপ্রিয়তার  শীর্ষে

গনভবন যেভাবে দখল করেছিলেন শিক্ষার্থীরা

Leave a Comment