চর্যাপদের আবিষ্কার সম্পর্কে বিস্তরিত আলোচনা-
১৯০৭ সালে ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় নামক পুথিটি আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের সাথে ডাকার্ণব ও দোহাকোষ নামে আরও দুটি বই নেপালের রাজ গ্রন্থাগার হতে আবিস্কৃত হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ১৯১৬ সালে সবগুলো বই একসাথে হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা নামে প্রকাশিত হয়।
সপ্তম থেকে দ্বাদম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে চর্যাপদগুলো রচিত। বাংলার পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাদের আমলে চর্যাগীতিগুলোর বিকাশ ঘটেছিল। চর্যাপদ সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সাহিত্য। বৌদ্ধ তান্ত্রিক সহজিয়া ধর্মের সাধন রীতির নিগৃঢ় সংকেতই চর্যাপদের প্রধান লক্ষ্য।
গ্রন্থের নামেও এ লক্ষ্য স্পষ্টত অনুভব করা যায়। নেপালে প্রাপ্ত পুথিটিতে গ্রন্থের নাম বর্ণিত হয়েছে চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বলে অর্থাৎ পুঁথির পথ গুলোর সাহায্যে কোনটি চর্য (আচরণীয়) আর কোনটি অ-চর্য (অনাচরণীয়) তা বিনিশ্চয় (নির্ণয়) করা যেতে পারে। পাল বংশের পরে আসে সেন বংশ। সেন বংশ হিন্দু ধর্ম এবং ব্রাক্ষণ্যসংস্কার রাজধর্ম হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে বৌদ্ধ সিদ্ধচার্যেরা এদেশ হতে বিতাড়িত হয় এবং নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন বাংলাদেশের বাহিরে নেপালে পাওয়া গেছে।