এক দেশে একটি বিশাল রাজ্য ছিলো… সেখানে একটি তরুণ রাজা ছিলেন নাম “ডেভিড” ডেভিড সম্প্রতি তার বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে সিংহাসন লাভ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ডেভিড এক বিজ্ঞ শিক্ষকের অধীনে বেড়ে উঠেছিলেন….. আর তার বাবা চলে যাবার পর ডেভিডের শিক্ষকেই তাঁর অভিভাবক হয়ে যায় এবং তাকে উপদেশ দিতে শুরু করেন। ডেভিডের শিক্ষক “ এডওয়ার্ড” এখন রাজ্যের মন্ত্রী এবং ডেভিডের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। সবই ঠিক ছিলো। কিন্তু গত বছর আবহাওয়ার পূর্বাভাস এডওয়ার্ডের ভূলের কারনে রাজ্যে মারাত্মক খাদ্র্য সংকট দেখা দেয়।
“ হতাশা ও ক্রোধে ডেভিড কিছু চিন্তা না করেই তাঁর গুরু এডওয়ার্ডকে রাজ্য ত্যাগ করতে এবং কখনো ফিরে না আসতে আদেশ দেন। রাজা ডেভিডের আদেশ মেনে নিয়েই এডওয়ার্ড হতাশা নিয়ে চুপচাপ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যান। নতুন জীবন শুরু করার জন্য এডওয়ার্ড দূরে এক গ্রামে কৃষক হিসেবে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও তার কাছে এখনো অনেক সম্পদ ছিলো। তবুও তিনি সাধারণ জীবনযাপন বেছে নিলেন এবং গ্রামবাসীর সাথে মিশে গেলেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার প্রজ্ঞার জন্য গ্রামবাসীর শ্রদ্ধা অর্জন করে নিলেন। “
“গ্রামের মানুষ ছোটখাটো বিষয়েও তাঁর পরামর্শ নিতে আসতো। অন্যদিকে রাজা ডেভিড তাঁর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানান সমস্যার মুখে পড়ছিল। আর এই সময়ে রাজা তাঁর বিশ্বস্ত উপদেষ্টা এডওয়ার্ডের কমতি অনুভব করছিল। ডেভিডের মনে অনুশোচনা জাগে যখন তিনি বুঝতে পারেন যে এডওয়ার্ডকে তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে এসে তাড়াহুড়ো করে ফেলে এবং সে রাগের বশে ভূল করে ফেলেছিল।তাই তিনি তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন,,, এডওয়ার্ড কে খুঁজে বের করতে… দিনগুলো সপ্তাহে পরিণত হয়, কিন্তু তারা তাকে খুঁজে পায়নি…. কেউ জানতোই না, এডওয়ার্ড কোথায় আছে? … তখন ডেভিডের মাথায় একটি বুদ্ধি আসে… এডওয়ার্ডের ছাত্র হিসেবে ডেভিডের বুদ্ধিও প্রখর ছিল। তিনি সৈন্যদের নির্দেশ দেন যেন তারা প্রতিটি গ্রামের প্রধানকে একটি চিঠি এবং একটি মাটির কলস পাঠায়। চিঠিতে প্রতিটি গ্রাম প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হয় যেন এক মাসের মধ্যে সবাই খালি কলসটিকে “জ্ঞান” দিয়ে পূর্ণ করে ফেরত পাঠায়। যদি তারা এটি করতে না পারে তাহলে তাদের মূল্যবান রত্ন দিয়ে এটি পূরণ করতে হবে। কলস টি এডওয়ার্ডের গ্রামেও পৌঁছায়….. চিঠি পেয়ে সেই গ্রামের প্রধান… দ্রুত তার পরামর্শ নিতে যায় এবং গ্রামবাসীরা তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য তার চারপাশে জড়ো হয়।
“জ্ঞান” এমন কিছু নয় যা একটি কলসে রাখা যায় এবং গ্রামেও যথেষ্ট রত্ন ছিল না যা দিয়ে এটি পূরণ করা যাবে। গ্রামবাসীরা ভয় পেতে শুরু করে…. বুঝতে পারে তারা হয়তো রাজা ডেভিড এই অনুরোধ পূরণ করতে পারবে না। এডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে তারা তাকে সাহায্যের জন্য জিজ্ঞাসা করে…. গ্রামবাসীরা তাদের শাস্তির বিষয়ে ভয় প্রকাশ করলে এডওয়ার্ড শান্তভাবে তাদের মাঝে বসে বলেন…. আমাকে কলস টি দিন। আমি এক মাসের মধ্যে এটি “জ্ঞান” দিয়ে পূর্ণ করে দেব। গ্রামের প্রধান তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি পরিকল্পনা করছো? তা আমাদেরকে বল, এডওয়ার্ড হাসলেন এবং বললেন, এখনো জানি না। এত দুশ্চিন্তার মধ্যে ভাবতে পারছি না। তবে আমি করে নিব… এডওয়ার্ড এর প্রজ্ঞার উপর বিশ্বাস রেখে গ্রামবাসীরা কলসটি তার হাতে তুলে দেয় এবং আশা করে যে তিনি কোন সমাধান ঠিকই বের করবেন।
“এডওয়ার্ড তার বাগানের শান্ত পরিবেশে চিন্তা করতে শুরু করল… কাছেই একটি ছোট কুমড়ো গাছের লতা দেখতে পান এবং হঠাৎ তার মাথায় একটি ধারণা আসে। তিনি একটি ছোট কুমড়ো লতা সহ সেই কলসের মধ্যে রেখে দেন… দিনগুলো পার হতে থাকে এবং তিনি সেটিকে যত্ন দিয়ে বড় করতে থাকেন। ধীরে ধীরে কুমড়োটি বাড়তে বাড়তে পুরো কলসটিকে ভরে ফেলে এবং তা বের করা অসম্ভব হয়ে যায়। অবশেষে এডওয়ার্ড লতাটি কেটে দেন এবং সম্পূর্ণ পূর্ণ কুমড়াসহ কলসটি রাজ্যে পাঠান। রাজা ডেভিড যখন কলসটি পেলেন, তিনি অবাক হয়ে দেখলেন যে এটি একটি বিশাল কুমড়ো দিয়ে ভরা।
”রাজা গভীর মনোযোগ দিয়ে কলসের দিকে তাকিয়ে রইলেন এবং ভাবলেন কিভাবে ছোট্ট একটি কুমড়ো পুরো জায়গাটি পূর্ণ করতে পারে। সেই মুহূর্তে তিনি বুঝতে গভীর প্রজ্ঞা বুঝতে পারলেন.” সত্যিকারের সফলতা ঘটে নিঃশব্দে, জোর করে বা তাড়াহুড়ো করে নয়। বরং ধৈর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে। রাজা তখনই বুঝতে পারে এটা তার উপদেষ্টে এডওয়ার্ডের দিয়েই সম্ভব…… কোন দ্বিধা ছাড়াই ডেভিড তার সেনাপতিকে নিয়ে এডওয়ার্ড কি খুঁজতে রওনা হন… রাজা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি নিজেই ক্ষমা চাইবেন এবং তার উপদেষ্টা কে রাজ্যে ফিরিয়ে আনবেন,,,,,
“এই গল্প থেকে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পায়… প্রথমত রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনার আবেগ, মনকে অন্ধ করতে পারে এবং পরবর্তীতে আপনাকে অনুশোচনায় ফেলে দিতে পারে।”
“দ্বিতীয়ত, কোন সমস্যার সমাধান করার আগে মনকে শান্ত করুন… আতঙ্ক উদ্যোগ ছেড়ে দিন। কারণ শান্ত মনই স্পষ্ট চিন্তা চাবিকাঠি…. এই স্বচ্ছতা থেকেই আপনি যে কোন সমস্যার সঠিক সমাধান খুঁজে পাবেন।”