ফোন চুরি হলো বাংলাদেশ কিন্তু সেই ফোন পাওয়া গেল ভারত থেকে। অদ্ভুত এই ফোন চুরির কাণ্ডে জড়িত এক আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্র। কিন্তু কথায় আছে চোরের ১০ দিন গেরস্থের একদিন। ফোন ছিন্তাই করে ভারতে ফোন পাচার করে দেওয়া হলেও, ফোনের মালিকের বুদ্ধিমত্তাই ফোনটি শেষমেশ খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের গুজরাট থেকে। কিভাবে চুরি হলো সেই ফোন আর কিভাবে বা আবার সন্ধান মিলল, এ নিয়ে বিস্তারিত থাকছে প্রতিবেদনে-
গত বছরের ৭ নভেম্বর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডে দিনাজপুরের একটি জেলার ফেরদৌস মিয়ার ফোন ছিনতাই হয়। ওই রাতেই ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। কিন্তু ফোনটি দেশের ভিতরে নয় উদ্ধার হয় ভারতের গুজরাট রাজ্যের অঞ্চল থেকে। ফেরদৌস মিয়ার বক্তব্য থেকে জানা যায়। সেদিন ধানমন্ডি আট নম্বর রোডে একটি বট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
হঠাৎ করেই দুজন লোক একটি মোটর বাইক চেপে তার সামনে দাঁড়ায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় ওরা। ফোনটি ছিল স্যামসাংয়ের এস টুয়েন্টি আল্ট্রা। চুরি হওয়া ফোন উদ্ধারের আশায় থানায় জিডি করলেন ফেরদৌস। থানা থেকে তাকে বলা হয়েছিল ছিনতাইকৃত ফোনটি কেউ ব্যবহার করা শুরু করলেই কেবল সেটা উদ্ধার করা যাবে।
এদিকে ফেরদৌসও নিজেই স্মার্ট থিঙ্কস নামে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি তৈরি একটি অ্যাপের মাধ্যমে ফোনটি সচল হলো নাকি বন্ধ তা নজর রাখছিলেন। কিছুদিন পরে একদিন সকালে ওই অ্যাপে তার ছিনতাই হওয়া ফোনের লোকেশন দেখায়। চুরি হয়ে যাওয়া ফোন চালু হওয়ায় ফেরদৌস প্রথমে খুশি হলেও অ্যাপের লোকেশন দেখে হতাশ হয়ে গেলেন। লোকেশন দেখাচ্ছিল ঢাকা থেকে ২৫৪৮ কিলোমিটার দূরের ভারতের গুজরাট রাজ্যের আমরেলি শহরে আছে তার ফোন। পরবর্তীতে ফেরদৌস জানতে পারেন পুলিশের অভিযানে ধরা হয় চুরি হওয়া বেশ কিছু ফোন। বেশিরভাগ দামি স্মার্টফোন প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার করে আন্তর্জাতিক বাঁচার চক্র।
সম্প্রতি রাজধানীর একটা এলাকায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যেখানে দুই দেশের চুরিচক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ও করা হয়। শুরুতে ফোন পাওয়ার আশা প্রায় হারিয়েই ফেললেও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নতুন এক পথে গেলেন। জিডি কপি ফোনের লোকেশন এর স্ক্রিনশট সহ বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করে ইমেইল পাঠান বাংলাদেশ ও ভারতের হাইকমিশন ।গুজরাটের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক রাজ্য সচিব গুজরাটের রাজ্য পুলিশের নুরাল অফিসার গুজরাট পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরেও কোন ইমেইল পেলেন না তিনি। তখন ফোনটি ফেরত পাবার আশাই ছেড়ে দেন ফেরদৌস। হঠাৎ করে প্রায় আড়াই মাস পরে গুজরাট পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ফেরদৌসের সঙ্গে। একটি বিদেশি নম্বর থেকে কল আসে ফেরদৌসের নম্বরে। ফেরদৌস বলেন প্রথমে ভেবেছিলাম কোন জালিয়া চক্রের কল। কিন্তু অপর প্রান্তে একটি টিম গুজরাটের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিলেন। তারপর গুজরাট পুলিশ কুরিয়ার করে বাংলাদেশে ফোনটি ফিরিয়ে দেন। তখন ফোনটি হাতে পেয়ে ফেরদৌস বিশ্বাস করলেন এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন।