শহীদ আবু সাইদের বেড়ে ওঠার গল্প ও তার জীবনি !…শহীদ আবু সাইদের বেড়ে ওঠার গল্প ও তার জীবনি !
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ আজ সেই অধ্যায়ের পাতায় পাতায় আছেন। অভাবের সংসারে শহীদ আবু সাঈদের বড় হওয়া। সংসারের অভাবকে দূর করতে তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সে পরীক্ষায় টিকেও যান কিন্তু সে নিজের ফলাফল নিজে দেখতে পারেননি।
২০২৪ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বিকেলে ১৮ তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়। আবু সাঈদ ততদিনে অন্য জগতের বাসিন্দা। শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ মকবুল হোসেন। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম।
শহীদ আবু সাঈদ ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী। ছোটবেলা থেকেই তিনি সকল পরীক্ষায় নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় জাফর পারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এই বিদ্যালয় থেকে তিনি পঞ্চম শ্রেণীতে জিপিএ ফাইভ পান।
এরপর তিনি স্থানীয় খালাস পীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হন রংপুর সরকারি কলেজে ২০১৮ সালে রংপুর । সেখান থেকেও জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
পরে ২০২০ সালে তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। অত্যন্ত দরিদ্র বাবা-মায়ের নয় সন্তানের একজন ছিলেন সাঈদ। নয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ও মেধাবী।
আরও পড়ুন শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য নয় বুকে জায়গা দিন
পরিবারের মধ্যে প্রথম কোন ব্যক্তি হিসেবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পেয়েছিলেন। কে নিয়ে তার ভাইবোনরা এতই আনন্দিত ছিলেন যে নিজেদের খরচ থেকে বাঁচিয়েও তারা সাঈদের পড়াশোনা খরচ মেটাতেন। এরপর খরচ বেশি হওয়ায় লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল কখনো ।
আবু সাঈদের বাড়িতে থাকার আলাদা কোন ঘর নেই, দুই ভাই এক বিছানায় থাকতেন। তেন বাবা সামান্য জমি থেকে একটা অংশ বিক্রি করেছেন ঘর তোলার জন্য। বাবা মায়ের আশা ছিল. সাইদ সরকারি চাকরি পেলে তাদের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। আবু সাঈদের নিজের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল এটা।
যে কারণে তিনি কোটা সংস্কারের দাবিতে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই। সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
শিক্ষার্থীরা আহত হচ্ছিলেন, কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়েছিলেন। এমন এক পর্যায়ে প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান আবু সাঈদ। সবাই যখন ভয়ে পেছনে সরে যাচ্ছিল, তাই তখন দুই হাত প্রসারিত করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পুলিশের আঘাতও তাকে সরাতে পারেনি।
তিনি পুনরায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেই মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশের মধ্যে তো বটেই. বিদেশেও এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে আবু সাঈদকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সবাই। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি মানুষকে উজ্জীবিত করে গেছেন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল @dailystory0,5